মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ব্রিটেনে নানা কর্মসূচির আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শনিবার ‘ইউকে ১৯৭১: পিপলস সলিডারিটি উইথ বাংলাদেশ’স লিবারেশন’ শিরোনামে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে যুক্তরাজ্যে নানা কর্মসূচির ৪০টি বিরল ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন এক দর্শনার্থী
ছবি: আশরাফুল আলম

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যপ্রবাসীরা যেমন এগিয়ে এসেছিলেন, তেমনি সে দেশের রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

মিছিল, সভা, কনসার্ট, ডাকটিকিট প্রকাশ—নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হয়। সেসব তৎপরতার আলোকচিত্র ও দলিল নিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ‘ইউকে ১৯৭১: পিপলস সলিডারিটি উইথ বাংলাদেশ’স লিবারেশন’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে যুক্তরাজ্যে নানা কর্মসূচির ৪০টি বিরল ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ব্রিটিশ কাউন্সিল যৌথভাবে এর আয়োজন করেছে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলা হয়, নটিংহাম-বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। সোচ্চার হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরাও। সে সময়কার বিভিন্ন তৎপরতা আলোকচিত্রের মাধ্যমে উঠে এসেছে। এ প্রদর্শনীর ছবিগুলো আর্কাইভ লন্ডন ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে নেওয়া হয়েছে।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন
ছবি: প্রথম আলো

প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর। একে সামনে রেখে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যপ্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, একাত্তরে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে যে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে, তা নথিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাত্তরে ব্রিটেনে যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, তার খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রদর্শনীতে উজ্জ্বল দাসের ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডার আর্কাইভ লন্ডন ১৯৭১ থেকে দলিল ও আলোকচিত্র এবং ডেভিড রজার গুয়েন ও ইউসুফ চৌধুরীর তোলা ছবি আছে। এটি সামগ্রিক দৃশ্য নয়। তবে সে সময় সংহতি প্রকাশের যে লক্ষ্য, তার একটি প্রতিচ্ছবি প্রদর্শনীতে তুলে ধারা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গ্লোবাল চেয়ারম্যান স্টিভি স্প্রিং সিবিই বলেন, গত ৫০ বছরে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ আরও দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক বন্ধন যুক্তরাজ্যের বৃহৎ এবং সক্রিয় বাংলাদেশি প্রবাসীদের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়েছে, যাঁদের অনেকেই অর্ধশতাব্দী আগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুক্তরাজ্যজুড়ে নানা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের গ্লোবাল চেয়ারম্যান স্টিভি স্প্রিং সিবিই
ছবি: প্রথম আলো

স্টিভি স্প্রিং সিবিই বলেন, এ প্রদর্শনী মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ব্রিটিশ জনগণের সমর্থনের স্মারক। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের ৭০ বছর—এ দুই উদ্‌যাপন খুব দারুণভাবে মিশে গেছে। এই প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ব্রিটিশ কাউন্সিল যৌথভাবে এ ধরনের আয়োজন করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের। প্রদর্শনী চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।