মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের নামে আ.লীগ নেতাদের প্লট-বাণিজ্য

১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আবদুল ওদুদ প্লটের জন্য ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করছেন।প্লটের ক্রেতা সেজে মুন্সী আবদুল ওদুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এক বছর আগে প্লট কিনেছি। তবে এখন এর দাম কত তা জানি না।' মোরসেদ আহমেদ বলেন, 'কিনলে তার দায়-দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমার দাম বলা নিষেধ।'তবে তিনি মোতাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে মোতাহার মুঠোফোনে বলেন, 'আমি ঢাকায় আছি। খুলনায় ফিরলি আমার সাথে দেখা করেন।'গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভৈরব নদ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে ওই নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক জায়গা ভরাট করা হয়ে গেছে। ভরাট স্থানে প্রায় ৩৫টির মতো টিনের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে।ওই জমি বরাদ্দ নিয়েছেন স্থানীয় আবুল কালাম। তিনি বলেন, 'বালু ভরাটের জন্য খালিশপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জয়নাল আবেদীন ৪০ জনের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এখানে যে মুক্তিযোদ্ধারা ঘর বানাচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকেও তিনি টাকা তুলছেন। তবে মোরসেদ ভাই মাঝেমধ্যে এসে খোঁজখবর নেন।'তবে জয়নাল আবেদীন টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, মোরসেদ ভাই প্লটের টাকা নিচ্ছেন।মোরসেদ আহমেদ বলেন, 'টাকা-পয়সা নেওয়ার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।' কীভাবে এখানে ঘর তুলছেন - জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ির জন্য নিজেরা টাকা তুলছেন। নৌবাহিনী উচ্ছেদ অভিযান চালালে আমরা সঙ্গে আছি।'এ কে এম সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, 'তারা টাকা নিচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছে। তবে এর সত্যতা জানি না। কেউ আমার নাম বললে মিথ্যা বলেছে। এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।'উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি শুনেছি। তবে ওই জমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নৌবাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছে।'মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আমার কাছেও ওই নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে জমি বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। তবে এটা দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। তারা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে এটা করছেন, যা দলের ভাবমূতি নষ্ট করছে।'

নিচু জায়গা ভরাট করে প্রায় ৩৫টির মতো টিনের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে

খুলনার রূপসা উপজেলার চরেরহাটে ভৈরব নদের চর ঘেঁষে জেগে ওঠা ছয় একর জমিতে বালু ভরাট করে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের নাম করে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্লট বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খালিশপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পুনর্বাসনের জন্য ওই জমিতে মুক্তিযোদ্ধা পল্লি করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলাম। পরে শুনলাম ওই জমি সরকারিভাবে নৌবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরসেদ আহমেদ ওরফে মনি ও খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম সানাউল্লাহসহ কয়েকজন মিলে মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ওই প্লট বরাদ্দ দিচ্ছেন। টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে সানাউল্লাহর কাছে। এরপর তাঁরা টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করছেন।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আট বছর ধরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোছাদ্দেক হোসেন ওই জমিতে মাছ ও ধানের চাষ করতেন। তবে জমির কোনো কাগজপত্র না থাকায় বছর দেড়েক আগে তৎকালীর মেয়র তাঁকে উচ্ছেদ করেন। সম্প্রতি ওই জমিতে মুক্তিযোদ্ধা পল্লি করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করা হয়। এর আগেই জায়গাটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নৌবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ওই আবেদনকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের নেতারা ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও নেতাদের জমিটি প্লট করে বরাদ্দ দিচ্ছেন। নেতাদের মধ্যে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সরদার মোতাহার। ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আবদুল ওদুদ প্লটের জন্য ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করছেন।
প্লটের ক্রেতা সেজে মুন্সী আবদুল ওদুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এক বছর আগে প্লট কিনেছি। তবে এখন এর দাম কত তা জানি না।’ মোরসেদ আহমেদ বলেন, ‘কিনলে তার দায়-দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমার দাম বলা নিষেধ।’


তবে তিনি মোতাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে মোতাহার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। খুলনায় ফিরলি আমার সাথে দেখা করেন।’
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভৈরব নদ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে ওই নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক জায়গা ভরাট করা হয়ে গেছে। ভরাট স্থানে প্রায় ৩৫টির মতো টিনের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে।
ওই জমি বরাদ্দ নিয়েছেন স্থানীয় আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘বালু ভরাটের জন্য খালিশপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জয়নাল আবেদীন ৪০ জনের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এখানে যে মুক্তিযোদ্ধারা ঘর বানাচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকেও তিনি টাকা তুলছেন। তবে মোরসেদ ভাই মাঝেমধ্যে এসে খোঁজখবর নেন।’
তবে জয়নাল আবেদীন টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, মোরসেদ ভাই প্লটের টাকা নিচ্ছেন।
মোরসেদ আহমেদ বলেন, ‘টাকা-পয়সা নেওয়ার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’ কীভাবে এখানে ঘর তুলছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ির জন্য নিজেরা টাকা তুলছেন। নৌবাহিনী উচ্ছেদ অভিযান চালালে আমরা সঙ্গে আছি।’
এ কে এম সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা টাকা নিচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছে। তবে এর সত্যতা জানি না। কেউ আমার নাম বললে মিথ্যা বলেছে। এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে ওই জমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নৌবাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছেও ওই নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে জমি বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। তবে এটা দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। তারা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে এটা করছেন, যা দলের ভাবমূতি নষ্ট করছে।’