মে দিবস হোক শ্রমিকদের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে ১ মে দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়।

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একটি মার্কেটের সামনে শ্রমিকেরা জমায়েত হয়েছিল কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে। সে দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আট ঘণ্টা কর্মপরিসর নির্ধারণ। অর্থাৎ তাঁরা চাইছিলেন, সরকার সব কারখানায় শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা বেঁধে দিক আট ঘণ্টা। এর অতিরিক্ত সময়–শ্রম দিলে শ্রমিকদের আলাদা পারিশ্রমিক দিতে হবে। উল্লেখ্য, তখন কারখানাভেদে শ্রমিকদের ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো।

পুলিশের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশ চলছিল বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই। কিন্তু বিপত্তি বাধে অজ্ঞাত ব্যক্তির ছোড়া বোমায়। আচমকা ছুটে আসা ওই বোমা শ্রমিকদের দিক থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলেই পুলিশের তাৎক্ষণিক ধারণা জন্মে। শুরু হয় শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ। উদ্ভূত হয় এক ভয়াবহ দাঙা। হতাহত হয় অসংখ্য শ্রমিক ও পুলিশ। পুলিশের গুলিতে শ্রমিক আর অজ্ঞাতনামার বোমায় পুলিশ সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারায়।

কথিত আছে যে প্রকৃত মৃত্যু, বিশেষ করে মৃত শ্রমিকের সংখ্যা সরকারি হিসাবের অনেক গুণ বেশি! সংখ্যাটা যা–ই হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শ্রমিকের মৃত্যুর এই ব্যাপারটা গোটা বিশ্বে একটা তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ধীরে ধীরে সেই কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টায় নামিয়ে আনে। অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর সঙ্গে অসংখ্য হতাহত হওয়া দরিদ্র শ্রমিকেরা সেদিন প্রতিবাদের ফলে দুটি অর্জন নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল। একটি ছিল দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ আর অন্যটি হচ্ছে ওভারটাইম।

প্রাপ্তিটা ভালোই ছিল বলা যায়। অন্তত তখনকার প্রেক্ষাপটে দেখলে নিজের পাওনাটুকু বুঝে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি তো পেয়েছিল! কিন্তু সম্মান?

শ্রমিকের প্রাপ্য সম্মানটুকু বুঝিয়ে দিতেই ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে–কে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তবে এত কিছুর পরও একটা শ্রেণির হয়তো ‘শ্রমিক’দের নামে কোনো দিবস পালন করতে লজ্জা হচ্ছিল। তাই তো পরবর্তী সময়ে এটিকে মে মাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে ‘মে ডে’ নাম দেওয়া হয়। সেই থেকে শ্রমিকের রক্তে অর্জিত দিবস থেকে মুছে গেল শ্রমিক শব্দটি! আজও আমরা শ্রমিকদের রক্তিম স্মৃতি স্মরণ করি শ্রমিক শব্দটা বাদ দিয়েই।

শ্রমিকের রক্তে অর্জিত দিবস থেকে শ্রমিক শব্দ মুছে ফেলা লোকদের জানাই মে দিবসের ধিক্কার। ঘাম আর রক্তের মিশ্রণে সভ্যতার ভিত নির্মাতা শ্রমিকের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

শিক্ষার্থী: ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট