মেয়ের চোখে স্বপ্ন বুনে চলে গেলেন মা

তাসলিমা আক্তার। মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে চিকিত্সক হবে ষ ছবি: প্রথম আলো
তাসলিমা আক্তার। মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে চিকিত্সক হবে ষ ছবি: প্রথম আলো

‘আব্বু মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে আম্মু আমাদের পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। আম্মুর স্বপ্ন ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন। এখন পড়ালেখা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাই কষ্টকর।’
রানা প্লাজার ভবনধসে নিহত শ্রমিক রমিছা বেগমের মেয়ে তাসলিমা আক্তার এভাবেই বর্ণনা করল তাঁর অতীত-বর্তমান। রমিছা কাজ করতেন রানা প্লাজার আটতলার একটি পোশাক কারখানায়। ভবনধসের কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এর দেড় বছর আগে নিখোঁজ হন তাঁর স্বামী রিকশাচালক মহির উদ্দিন। তাঁদের দুই সন্তান মোহাম্মদ আলী (১৬) ও তাসলিমা আক্তার (১০)। মোহাম্মদ আলী বিপণিবিতানে কাজ করে। তাদের একমাত্র আশ্রয় এখন খালাতো বোন পারভীন আক্তার।
পারভীন জানান, অভাবের তাড়নায় রমিছা ছেলেমেয়ে নিয়ে আট বছর আগে সাভার আসেন। প্রথমে চাকরি নিয়েছিলেন ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) একটি পোশাক কারখানায়। বেশি বেতন পেয়ে সেটা ছেড়ে আড়াই বছর আগে চাকরি নিয়েছিলেন রানা প্লাজার নিউ ওয়েব স্টাইলে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। গৃহশিক্ষকও রেখেছিলেন।
পারভীনের বাসায়ই কথা হয় মা-বাবাহারা এই দুই ভাইবোনের সঙ্গে। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর অষ্টম শ্রেণীতে থেমে যায় মোহাম্মদ আলীর পড়ালেখা। চাকরি নেয় একটি বিপণিবিতানে। তবে বোন তাসলিমা স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। দুই ভাইবোন এখন আশ্রয় নিয়েছে শিমুুলতলায় পারভীনের বাসায়।
তাসলিমা বলে, ‘আম্মুর স্বপ্ন ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু এখন আমার আর পড়ালেখায় মন বসে না। সব শূন্য লাগে।’
সঙ্গে সঙ্গে ভাই মোহম্মদ আলী বলে, ‘যত কষ্টই হোক, আমি মায়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাব।’ তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ে ভাইবোন।
মায়ের মৃতদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছিল মোহাম্মদ আলী। তবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনো সহায়তা মিলেনি। উপজেলা প্রশাসনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে বলা হয়, তালিকায় নাম নেই।
তবে সাভার উপজেলা প্রশাসনের করা নিহতদের তালিকায় ৭০ নম্বরে রমিছা বেগমের নাম রয়েছে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, ‘তালিকায় নাম থাকলে অবশ্যই রমিছার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে।’