মোবাইল গেমসে আসক্ত কিশোরের জীবনে ছন্দপতন

প্রতীকী ছবি

করোনার বিধিনিষেধে ঘরে থেকে মুঠোফোনে পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ে যশোরের ঝিকরগাছা পৌর শহরের এক কিশোর। মানসিক ভারসাম্য হারানো ওই কিশোরকে এখন শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে; না হলে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না বলে পরিবার দাবি করেছে।

১৭ বছর বয়সী এই কিশোরের বাবা সৌদি আরবপ্রবাসী। তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, ২০২০ সালে কোভিড মহামারি শুরুর বছরে এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত ছেলেটি। বিধিনিষেধে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তখন ঘরে বসে মুঠোফোনে অনলাইন গেমসের নেশা তাকে পেয়ে বসে। পাবজি, ফ্রি ফায়ার—এসব খেলায় আসক্ত হয়ে যায় সে। নিষেধ করলে শুনত না। নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে খেলত। অনেক বকাঝকা করেও খেলা ছাড়াতে পারেনি পরিবার। এখন আর সে নিয়ন্ত্রণে নেই। আসক্তি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের আসবাব ভাঙচুর করে। সামলাতে না পেরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। এ অবস্থায় তাকে স্কুলেও পাঠানো যাচ্ছে না।

দুই ভাই–বোনের মধ্যে এই কিশোর ছোট। বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই। বোন বলেন, করোনা মহামারির সময় তিনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। মা–বাবা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। স্কুলও বন্ধ ছিল। তখন ঘরে বসে বসে গেম খেলা শুরু করে তাঁর ভাই।
ছেলেটির এক ভাগনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমিও মামার সঙ্গে মুঠোফোনে অনলাইন গেম খেলতাম। যখন দেখলাম নেশা হয়ে যাচ্ছে, তখন আমি খেলা থেকে সরে এলাম। কিন্তু মামা আর আসতে পারেনি। মামা আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট। এখন সে ওই গেমের লেভেল নিয়ে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলে। লোকজনের সঙ্গে এখন আর সে মিশতে চায় না। বাড়িতে কেউ এলে মারতে যায়। এ জন্য তাকে ঘরে শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে। তাকে সুস্থ করার জন্য যশোর মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ আমিনুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

প্রতীকী ছবি

এ বিষয়ে যশোর মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোনে অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়ে পরিবারের লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ছেলেটি। এখন সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। পরিবারে রেখে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি চিকিৎসা দিলে সে ভালো হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মুঠোফোনে অনলাইন গেমসের নেশা মাদকাসক্তির মতোই ভয়ংকর। ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। এ বিষয়ে মা–বাবাসহ অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।
শিকলে বেঁধে রাখার বিষয়ে চিকিৎসক আমিনুর রহমান বলেন, কাউকে শিকলে বেঁধে রেখে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। পরিবারের সবার সঙ্গে রেখে আন্তরিক পরিবেশে সেবা দিতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে শিকলে বেঁধে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কিশোরের ভাগনে বলেন, ‘আমার মামা আর তার মা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। নিয়ন্ত্রণের জন্যই তাকে বেঁধে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পর এখন মাঝেমধ্যে হাত খুলে রাখা হচ্ছে। সাত দিন পর তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার কথা রয়েছে।’

সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান বলেন, গুরুতর মানসিক রোগীদের সাধারণত ইনডোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়। কিন্তু যশোরের কোনো হাসপাতালে মানসিক রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করতে সঙ্গ দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি। আমিনুর রহমান বলেন, এ জাতীয় রোগীর কাউন্সেলিং বেশি প্রয়োজন। মুঠোফোন বাদ দিয়ে তাকে সঙ্গ দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে।