যানবাহনের ফিটনেস ও লাইসেন্স হালনাগাদের সুযোগ

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। ফাইল ছবি
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। ফাইল ছবি

যানবাহনের ফিটনেস নবায়ন ও লাইসেন্স হালনাগাদ করার জন্য আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় পাবেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এই সময় পর্যন্ত লাইসেন্স ও ফিটনেসের বিষয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। গতকাল শনিবার রাতে পরিবহননেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই তথ্য জানান।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গতকাল রাত সোয়া ৯টায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টার পরে। এতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা ৩০ জুন পর্যন্ত আর নতুন কোনো কর্মসূচি দেবেন না। নতুন আইনের যেসব ক্ষেত্রে কারাদণ্ড ও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, সেগুলো কমানোর জন্য তাঁরা অনুরোধ করেছেন। তাঁরা আইন মানেন। আইনে কিছু অসংগতি আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা সংশোধন করবেন বলে তিনি আশা করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, পরিবহন শ্রমিকনেতারা যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সমস্যার কথা বলেছেন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ফিটনেস ও লাইসেন্স হালনাগাদ করে নেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত এই দুই কারণে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করা হবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বেশ কিছু ধারার বিষয়ে শ্রমিকনেতারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি সুপারিশ আকারে সেগুলো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবেন। তারা যদি মনে করে সংশোধন করা দরকার, তবে তা করবে। তবে সবকিছু যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই করা হবে।

বর্তমানে বেশির ভাগ চালক হালকা ও মাঝারি ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স নিয়ে বাস–ট্রাকের মতো বড় যানবাহন চালিয়ে আসছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরা ৩০ জুন পর্যন্ত ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন।

>

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের বৈঠক। ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন কোনো কর্মসূচি দেবে না সংগঠনটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল—তাহলে ৩০ জুন পর্যন্ত চালকেরা ভুয়া লাইসেন্স বা ত্রুটিযুক্ত লাইসেন্স নিয়ে যানবাহন চালাতে পারবেন কি না? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর আছে, এ ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই। তবে কয়েকটি বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনটি এক বছরের বেশি সময় পর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেয় সরকার। প্রথম দুই সপ্তাহ এই আইন প্রয়োগের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৬ নভেম্বর আইনটির প্রয়োগ শুরু হয় শিথিলভাবে। কিন্তু সেদিন থেকেই সারা দেশের পরিবহনশ্রমিকেরা জেলায় জেলায় ধর্মঘট শুরু করেন। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যাত্রী পরিবহন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ২০ নভেম্বর ভোর থেকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সারা দেশে ধর্মঘট শুরু করে। এতে পণ্য পরিবহনও ব্যাহত হয়। ওই দিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আইনের কিছু ধারা সংশোধনের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ঐক্য পরিষদ।