যানবাহনের বিমা না থাকলেও মামলা নয়

প্রথম আলো ফাইল ছবি

তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা না থাকলে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের বিরুদ্ধে মামলা থেকে বিরত থাকার জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমান মোটরযান আইনে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমার কথা উল্লেখ আছে। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। তাই এই বিমা না থাকা আইনের লঙ্ঘন বা দণ্ডনীয় অপরাধ নয়। এ অবস্থায় তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা না থাকার দায়ে মোটরযান বা মোটরযানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সুযোগ নেই।

গত বছর নভেম্বরে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর হয়েছে। এর আগে মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ অনুসারে যানবাহন পরিচালিত হতো। এই আইনে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, তৃতীয় পক্ষের বিমা মূলত যানবাহনের যাত্রী, চালক ও চালকের সহকারী এবং সড়কের আশপাশের সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির জন্য করা হয়। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বা যানবাহনের দ্বারা যাত্রী, চালক ও চালকের সহকারী ও সম্পদের ক্ষতি হলে তা তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমার মাধ্যমে সমাধান করতে হয়। আর যানবাহন বিনষ্ট বা ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিমা আলাদা, যা প্রথম পক্ষ ঝুঁকি বিমা বলা হয়। এটি নতুন আইনেও আছে।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই তহবিল থেকে দুর্ঘটনায় হতাহতের ক্ষতিপূরণও দেওয়ার কথা। পরিবহন মালিক ও কোম্পানি থেকে এই তহবিলে প্রতি বছর বছর কিংবা এককালীন চাঁদা নেওয়ার বিধান রয়েছে। এই তহবিল পরিচালনায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে। নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর এখনো সেই তহবিল গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক না হওয়া সত্ত্বেও কোথাও কোথাও পুলিশ মামলা দিচ্ছে, জরিমানা আদায় করছে। পরিবহন মালিক সমিতি বিআরটিএর কাছে প্রতিকার চেয়ে গত ২২ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দুটি চিঠি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা না থাকার দায়ে মামলা না করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠি দেয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকির বিষয়টি আর্থিক তহবিলেই সমাধান করা আছে। এ জন্যেই নতুন আইনে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু পুলিশের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে কোথাও কোথাও মামলা হচ্ছে। আসলে এটা উচিত নয়।

ফিটনেসের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট

যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেওয়ার জন্য আগে অনলাইনে সময় ঠিক করার নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন এই নিয়ম চালু হচ্ছে। এই নিয়মে প্রথমে অনলাইনে ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময়-তারিখ ঠিক করা হবে। এরপর নির্ধারিত দিনে যানবাহন নিয়ে হাজির হয়ে সনদ সংগ্রহ করতে হবে।

বাণিজ্যিক যানবাহনের প্রতি বছরে একবার ফিটনেস সনদ নিতে হয়।

মোটরসাইকেলের এই সনদ দরকার হয় না। ব্যক্তিগত নতুন গাড়ির ফিটনেস সনদ একবারে পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হয়। কোনো যানবাহনের ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগে যে কোনো দিন বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে সনদ সংগ্রহ করতে হয়। অর্থাৎ দিন-তারিখ ঠিক না করে গ্রাহক তার ইচ্ছেমতো সময়ে গিয়ে সনদ সংগ্রহ করেন। নতুন নিয়মে গ্রাহককে নির্ধারিত দিনে এবং তাঁর জন্য বরাদ্দ করা সময়েই কেবল সেবা পেতে পারবেন।

শুরুতে এই সেবা ঢাকার মিরপুর, কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এবং উত্তরার দিয়াবাড়ি মিরপুর কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। পর্যায়ক্রমে এই সেবা অন্যান্য কার্যালয়ে সম্প্রসারণ করা হবে বলে বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে।

ফিটনেসের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যাবে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে। এর জন্য প্রথমে (bsp.brta.gov.bd) ঠিকানায় নিবন্ধন করতে হবে। নিজের গাড়ির নম্বর ট্যাগ করতে হবে। এরপর অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্বাচন করে তা নিশ্চিত করতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত হলে নির্ধারিত সময়ে যানবাহন নিয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ে যেতে হবে।

বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে দৈনিক ৫০০-৬০০ যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেওয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে সব গ্রাহক একসঙ্গে হাজির হন। ফলে লাইন বিআরটিএ কার্যালয় ছাড়িয়ে সড়কে চলে যায়। এই লাইন ঠেকাতেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) লোকমান হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, এর ফলে গ্রাহককে লম্বা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বিআরটিএ কার্যালয়ের শৃঙ্খলাও নিশ্চিত করা যাবে।