যুক্তরাজ্যের এয়ার শো-তে আকাশবীণা

আকাশবীণাতে বোয়িংয়ের প্রোডাক্ট মার্কেটিং বিষয়ক (কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস ফ্রিটাস। ছবি: প্রথম আলো
আকাশবীণাতে বোয়িংয়ের প্রোডাক্ট মার্কেটিং বিষয়ক (কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস ফ্রিটাস। ছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাজ্যের ফার্নবরা এয়ার শোতে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ড্রিমলাইনার-৭৮৭-৮। ফার্নবরার আকাশে এটি নানা কসরত দেখাল দর্শনার্থীদের। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে কেনা এই ড্রিমলাইনারটি এখনো বাংলাদেশ হাতে পায়নি। তার আগেই বাড়তি পাওনা হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম এয়ার শো-তে প্রদর্শিত হয়ে সেটি বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরল।

এক বছর পরপর যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে এই শো অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ১৬ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই এয়ার শো। উড়োজাহাজ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নির্মাতা, ক্রেতা, বিনিয়োগকারী ও সেবাপ্রদানকারীদের মিলনমেলা বসে এখানে।

এই শো-তে প্রদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য তৈরি করা ড্রিমলাইনারটি নিয়ে আসে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। বিমান বহরে যুক্ত হতে যাওয়া নতুন প্রজন্মের এই উড়োজাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আকাশবীণা’।

যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে এয়ার শোতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘আকাশবীণা’। ছবি: প্রথম আলো
যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে এয়ার শোতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘আকাশবীণা’। ছবি: প্রথম আলো

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের বাংলা গণমাধ্যমের কর্মীদের উড়োজাহাজটি ঘুরে দেখার সুযোগ করে দেয় বিমান। দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় নানা আকারের উড়োজাহাজ। যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বিমান এবং হেলিকপ্টার সবই আছে এখানে।

এক আকাশে উড়ে কারিশমা দেখাচ্ছে নানা নকশার উড়োজাহাজগুলো। একপর্যায়ে আকাশে উড়ল ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮। আকাশে কয়েক চক্কর দিয়ে হেলে দুলে নানা কসরত দেখাল বাংলাদেশের রঙে রাঙানো এই উড়োজাহাজ।

বোয়িংয়ের প্রোডাক্ট মার্কেটিং (কমার্শিয়াল এয়ারলাইনস) বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস ফ্রিটাস প্রথম আলোকে বলেন, বিমানের সঙ্গে বোয়িংয়ের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে বিমানের জন্য তৈরি ড্রিমলাইনারটি তারা এয়ার শো-তে নিয়ে এসেছেন। এই কর্মকর্তা বলেন, ড্রিমলাইনার একটি নতুন প্রজন্মের যাত্রীবাহী বিমান। এটি বেশ হালকা এবং ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী। যাত্রীদের জন্য ওয়াইফাই সংযোগ, টিভি দেখা ও টেলিফোনে কথা বলাসহ নানা সুবিধা আছে এতে। এই বিমান ১৭ ঘণ্টা উড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ড্রিমলাইনারে চড়ে যাত্রীরা সহজে ক্লান্ত হবেন না।

২০১১ সাল থেকে ড্রিমলাইনার বাজারে এসেছে জানিয়ে বোয়িংয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত বিশ্বের ৭৮টি ক্রেতার কাছে মোট ১ হাজার ৩৭৭টি ড্রিমলাইনার বিক্রি করা হয়েছে। আরও ৬৫০ টির ক্রয় আদেশ রয়েছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ড্রিমলাইনার সম্পূর্ণ নিরাপদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ এয়ারক্রাফট ২৫ বছরের সেবা দিয়ে থাকে। তবে ড্রিমলাইনার তার চাইতে আরও অনেক বেশি বছর ধরে সেবা দিতে পারবে বলে তাঁর বিশ্বাস। ড্রিমলাইনারকে বোয়িংয়ের অত্যন্ত সফল প্রজেক্ট হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে এয়ার শোতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ড্রিমলাইনার। বিমানবহরে যুক্ত হতে যাওয়া নতুন প্রজন্মের এই উড়োজাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আকাশবীণা’। ছবি: প্রথম আলো
যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফার্নবরাতে এয়ার শোতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ড্রিমলাইনার। বিমানবহরে যুক্ত হতে যাওয়া নতুন প্রজন্মের এই উড়োজাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আকাশবীণা’। ছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে এই উড়োজাহাজটি উড়িয়ে এনেছেন গ্রেগ বিগগ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিয়াটল থেকে যুক্তরাজ্যে আসতে তাঁর ৮ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। শুক্রবার তিনি আবার এটি সিয়াটল নিয়ে যাবেন।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (পিআর) শাকিল মেরাজ জানান, ২০০৮ সালে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে বোয়িংয়ের কাছ থেকে মোট ১০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে বিমান। সেই চুক্তি অনুযায়ী বোয়িং ইতিপূর্বে চারটি ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেল এবং দুটি ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ সরবরাহ করেছে। বাকি রয়েছে চারটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮। তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে শো-তে প্রদর্শিত ড্রিমলাইনারটি আগামী ২০ আগস্ট বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দ্বিতীয় ড্রিমলাইনারটি চলতি বছরের নভেম্বরে এবং বাকি দুটি ড্রিমলাইনার আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে সরবরাহের কথা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ড্রিমলাইনারে আসনসংখ্যা ২৭১। ঢাকা-লন্ডন রুটে আপাতত এটি ব্যবহার করা হবে না। শুরুতে ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে এটি চলবে।