যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্টকে অর্থ দিতে বিএনপি কি অনুমোদন নিয়েছে, প্রশ্ন প্রতিমন্ত্রীর

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নিজের দপ্তরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন
ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্রে তদবিরকারী বা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য বিএনপি সাড়ে ৩৭ লাখ ডলার খরচ করেছে, যা বর্তমান মূল্যে ৩২ কোটি টাকার মতো। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএনপি কীভাবে আর্থিক লেনদেন করেছে, তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর দপ্তরে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ওই টাকা বৈধ পথে আয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে কি না, সেটা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রকেও অনুরোধ জানানো হবে।

বিএনপি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বলে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘আটটি চুক্তির কপি আমাদের হাতে আছে। এর মধ্যে ন্যূনতম তিনটি চুক্তি করেছে বিএনপি।’ তিনি জানান, ওয়াশিংটনভিত্তিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজি এলএলসির সঙ্গে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের মে মেয়াদের চুক্তি করা হয়েছিল। ওই চুক্তিপত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি হিসেবে আবদুস সাত্তারের নাম দেওয়া আছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী দলের ঠিকানা ব্যবহার করে যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, আমরা ধরে নিতে পারি জাতীয়তাবাদী দল সরাসরি ওই টাকাগুলো দিয়েছে। এই টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গেছে কি না। যদি অনুমোদন না নিয়ে পাঠানো হয়, তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আছে, সেই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে এবং নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আশা করি।’

বিএনপি লবিস্ট নিয়োগের ব্যয় লিপিবদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপির লবিস্ট নিয়োগসংক্রান্ত নথি ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ (উন্মুক্ত)। নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক যদি চায়, একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নোটারির দ্বারা সত্যায়িত করে তাদের কাছে জমা দেওয়া যাবে। তারা যোগাযোগ করলে দূতাবাসের মাধ্যমে ওই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনে দিতে পারবে।

শাহরিয়ার আলম উল্লেখ করেন, লবিস্ট নিয়োগের চুক্তিপত্রে জামায়াতে ইসলামীর ঠিকানা দেওয়া নেই। তবে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের যে উদ্দেশ্য, সেখানে তাদের কথা বলা আছে। এটি জামায়াতকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য যথেষ্ট।

আরও পড়ুন

যাদের সঙ্গে চুক্তি

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বিএনপি ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজি, একিন গ্যাম্প, টনি ক্যাডম্যান ও র‌্যাসকি পার্টনার নামে চারটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আবার জামায়াতে ইসলামী সরাসরি চুক্তি না করলেও পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি কোম্পানি তাদের হয়ে ক্যাসিডি অ্যাসোসিয়েটস, হাশ ব্ল্যাকওয়েল এবং ক্লোকরুম অ্যাডভাইজার নামক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়োগ দিয়েছে। জামায়াতের পক্ষে করা চুক্তিতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেটি পরিষ্কার নয় বলে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত একটি চুক্তি হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক হিসাবে, এখানে খরচ হয় ১০ লাখ ডলার। একিন গ্যাম্প ও টনি ক্যাডম্যানের সঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চুক্তিতে আমাদের হিসাবমতে অন্তত ২৭ লাখ ডলার খরচ করা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি তাদের উদ্দেশে বলব, ওই সব দেশ খতিয়ে দেখবে তাদের দেশের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একটি রাজনৈতিক দল যে অর্থ ব্যয় করেছে, সেটি অবৈধ পথে আয় করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ওই সব দেশ, যাদের বিবেক দৃঢ় এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা যেন অবৈধ পথে আয় করা অর্থের মাধ্যমে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার হতে না দেয় এবং এই অপচেষ্টা রুখতে সহায়তা করে।

এই টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গেছে কি না। যদি অনুমোদন না নিয়ে পাঠানো হয়, তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আছে, সেই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে এবং নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আশা করি।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওই চুক্তিগুলোতে বিএনপি ও জামায়াতের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আরও অনেক কাজ তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে হয়েছে তৃতীয় কোনো দেশের ঠিকানা ব্যবহার করে।’

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রশাসন, নীতিনির্ধারক, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছে। এদের মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বিজিআর। তাদের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়ে দেখা যায়, গত বছর বিজিআর বাংলাদেশের কাছ থেকে ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে পেয়েছে, বছরে যার পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি- জামায়াত সুস্পষ্টভাবে বর্তমান সরকার ও দেশবিরোধী প্রচারণার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করেছে এবং তার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে । বিএনপি -জামায়াতের অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাপানোর জন্য ২০১৫ সালে একটি পিআর ফার্ম নিয়োগ করে সরকার । এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়।’

তিনি জানান, ২০১৩-১৪ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্যসংবলিত’ প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচার শুরু করে বিএনপি-জামায়াত। তখন এসব অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাপানো এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি পিআর প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এই পিআর প্রতিষ্ঠানকে দেশের কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ভুলভাবে লবিস্ট ফার্ম হিসেবে তুলে ধরেছে । প্রকৃতপক্ষে সরকার কোনো লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেনি। লবিস্ট ফার্ম অপপ্রচারের জন্য বিএনপি-জামায়াতই নিয়োগ করেছে।’
আরও পড়ুন