যেভাবে গোপন কক্ষে ‘সন্ত্রাসী’ ঠেকানো হবে

নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান
ফাইল ছবি

ভোটের সময় গোপন কক্ষের ‘সন্ত্রাসী’ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইভিএমের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির দ্বিতীয় ধাপের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় আজ। দলগুলোর প্রতিনিধিদের আলোচনায় গোপন কক্ষে গিয়ে ইভিএমের বাটন একজনের বদলে আরেকজন চেপে দেওয়ার বিষয়টি আসে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে গোপন কক্ষে ‘সন্ত্রাসী’ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান কমিশনার আহসান হাবীব খান। তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, একটাই চ্যালেঞ্জ, অন্য কেউ বা সন্ত্রাসী ইভিএমের বাটন টিপ দিল কিনা। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা অনেকগুলো পন্থা ব্যবহার করেছি।’

পন্থাগুলো তুলে ধরে আহসান হাবীব খান বলেন, ‘প্রথমত, ভবিষ্যতে সব কেন্দ্রে না হলেও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখব। দ্বিতীয়ত, গোপন কক্ষ ছাড়া সাংবাদিকদের পুরো ভোটকক্ষে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও গোপন কক্ষ ছাড়া অন্য জায়গায় প্রবেশের সুযোগ দিয়েছি। উপরন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলেছি, কোনো গন্ডগোল হলে বা সন্দেহ হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চাইবেন। না পেলে ভোট বন্ধ করে দেবেন।’

আজকের সভায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সাংগঠনিক সচিব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ নির্বাচনের পুরো ব্যবস্থা নিয়ে। ইভিএমে একজনের বাটন অন্যজন চেপে দেয়, এটা এখন বড় উদ্বেগ।’

ইসিকে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ না করার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের স্বাদ কেমন ও কী কী, তা আমরা গ্রহণ করেছি। একজন প্রার্থী হিসেবে এর বিষক্রিয়া শরীরে এখনো বিদ্যমান।’
সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইসি আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করবে না। এটার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা লাগবে। তিনি সব রাজনৈতিক দলেরও সহযোগিতা চান।

সিইসি বলেন, ‘পাঁচজন কমিশনার আমরা। আমাদের ওপর যদি আপনারা নির্ভর করেন, তাহলে কিন্তু নির্বাচন সুন্দর হবে না। আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) দায়িত্ব অনেক বেশি। আমি কয়টা সেন্টারে যাব সিইসি হয়ে, উনি (অন্য কমিশনার) কয়টা সেন্টারে যাবেন। ওখানে গিয়ে আমরা কি লড়াই করতে পারব লাঠি নিয়ে, পারব না। তবে আমরা পুলিশ, বিজিবি মোতায়েনের চেষ্টা করতে পারব।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর। এ ছাড়া ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

দ্বিতীয় ধাপের মতবিনিময় সভায় ইসি ১৩টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানালেও ৮টি দল অংশ নিয়েছে। দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস।

বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এই সভা বর্জন করেছে।