রংপুরের ব্র্যান্ড ‘হাঁড়িভাঙ্গা’, নাম কুড়িয়েছে পুরো দেশে

রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় প্রায় ৩০ বছর আগে। এই আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম।

রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাত শুরু হয়েছে। বাগান থেকে আম পেড়ে তা বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা, রংপুর।
ফাইল ছবি

রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের নাম এখন মোটামুটি সবার জানা। জাতটি নিয়ে দেশের আমের বাজারে নাম লিখিয়েছে রংপুর। শুধু নাম লেখানো নয়, এটি পরিণত হয়েছে রংপুরের ‘ব্র্যান্ডে’।
হাঁড়িভাঙ্গা রংপুরে চাষিদের ভাগ্যও বদলে দিয়েছে। বদলেছে গ্রামের দৃশ্য। এখন আমের মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর মতো রংপুরের অর্থনীতিতে তৈরি হয় চাঞ্চল্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, হাঁড়িভাঙ্গা আমকে কেন্দ্র করে রংপুরে প্রায় ১২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আমবাগানের মালিক, আমের ফড়িয়া, আমবাগানের পরিচর্যায় নিয়োজিত ব্যক্তি, মৌসুমি আম বিক্রেতা, পরিবহনকারী-আমের দামের অংশ যায় সবার ঘরে। এবার অনেক বেকার তরুণ হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন।

হাঁড়িভাঙ্গা আমের নাম অবশ্য শুরুতে ছিল মালদিয়া। এ আমের আবিষ্কারক হিসেবে স্থানীয়ভাবে নফল উদ্দিন পাইকারকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন এক বৃক্ষপ্রেমিক। তাঁর ছেলে আমজাদ হোসেন পাইকার জানান, সম্ভবত ১৯৪৯ সাল। রংপুরের মিঠাপুকুরের উঁচা বালুয়া গ্রামটি ছিল ঝোপজঙ্গলে ভরপুর। সেই এলাকার একটি জমি থেকে একটি আমের চারা নিয়ে এসে কলম করেন তাঁর বাবা। আমগাছটিতে মাটির হাঁড়ি বেঁধে পানি দেওয়া হতো। একদিন রাতে কে বা কারা হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে।

আমজাদ হোসেন বলেন, গাছটিতে একসময় বিপুল পরিমাণ আম ধরে। খেতে খুবই সুস্বাদু। বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে লোকজন এই আম সম্পর্কে জানতে চান। তখন নফল উদ্দিন মানুষকে বলেন যে হাঁড়িভাঙ্গা গাছের আম এগুলো। তখন থেকেই গাছটির আম হাঁড়িভাঙ্গা নামে পরিচিতি পায়।

রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আমের মাতৃগাছটি এখনো বেঁচে আছে। এটি জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছের তেকানী গ্রামে। এ গাছ থেকেই রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আম ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

হাঁড়িভাঙ্গার বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। রংপুরে আমটির বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় প্রায় ৩০ বছর আগে। তবে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা বেড়েছে পাঁচ-সাত বছরে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, হাঁড়িভাঙ্গা আমকে কেন্দ্র করে রংপুরে প্রায় ১২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আমবাগানের মালিক, আমের ফড়িয়া, আমবাগানের পরিচর্যায় নিয়োজিত ব্যক্তি, মৌসুমি আম বিক্রেতা, পরিবহনকারী-আমের দামের অংশ যায় সবার ঘরে। এবার অনেক বেকার তরুণ হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন।

রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকায় উৎপাদিত হচ্ছে এই আম। এ এলাকার লাল মাটিতে আমটি ভালো হয় বলে চাষিরা দাবি করছেন।
হাঁড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক অনেকেই। তাঁদের মধ্যে দুজন হলেন মিঠাপুকুরের লুৎফর রহমান ও আবদুস সালাম সরকার। তাঁরা ১৯৯০ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ শুরু করেন। আবদুস সালামের বাগান ১৪ একর জমিতে। এরই মধ্যে তিনি নিজের আমবাগান ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন এক পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে।

আবদুস সালাম বলেন, আমের বিপণনব্যবস্থা খুব দুর্বল। রাস্তাঘাট এখনো ভালো নয়। ফলে আমের বাজার ধরতে অনেক কষ্ট পেতে হয়।
ডিএইর হিসাবে, হাঁড়িভাঙ্গা আম প্রতি হেক্টরে ৩০০ মণের মতো উৎপাদিত হয়। বর্তমানে আমের মণপ্রতি দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এক হেক্টরের বাগানে চাষিদের আয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা বাদ দিলেও চাষিদের তিন লাখ টাকা লাভ থাকছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় প্রায় ১৭ লাখ হাঁড়িভাঙ্গা আমগাছ রয়েছে। এ বছর জেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৭ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙ্গা আমের উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।