রন-দিপুর আবেদন আপিলের তালিকা থেকে বাদ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিতদের ১০ হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) দিতে হাইকোর্ট সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। হত্যাচেষ্টার এক মামলায় দেশের বাইরে থেকে ওই দুই ভাই হাইকোর্টে আগাম জামিন চান, যা খারিজ করে ওই আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন ও লিভ টু আপিল দায়ের করার জন্য অনুমতি চেয়ে তারা আবেদন (অ্যাফিডেভিট দায়েরে অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছিলেন। এই আবেদন দুটি আজ বৃহস্পতিবার কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত দেন।

অনুমতি চেয়ে দুই ভাইয়ের করা আবেদন আজ শুনানির জন্য ছিল। দুই ভাইয়ের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি চার সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান। পরে শুনানি নিয়ে ওই আদেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুই ভাইয়ের অপর আইনজীবী মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন একটি আবেদন করেছিলেন, যা কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। দুই ভাইয়ের আইনজীবী সম্পর্কে হাইকোর্টের দেওয়া পর্যবেক্ষন ও মন্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে এই লিভ টু আপিলটি করা হয়।

আদালতে রাস্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) দুজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় দুই ভাই দেশের বাইরে থেকে হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ২০ জুলাই হাইকোর্টের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ তা খারিজ করে দেন। সেদিন হাইকোর্ট আবেদনকারী দুই ভাইকে জরিমানা হিসেবে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ১০ হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিতে নির্দেশ দেন। আইন ও সংবিধানপরিপন্থী দরখাস্ত (জামিন আবেদন) এনে আদালতের মূল্যবান সময় অপচয় করায় ওই জরিমানা করা হয়।

সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদার
ছবি: সংগৃহীত

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, হাইকোর্টের আদেশ ও পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন (সিএমপি) করার অনুমতি চেয়ে দুই ভাইয়ের পক্ষে ২৭ জুলাই একটি আবেদন (অ্যাফিডেভিট দায়েরে অনুমতি চেয়ে আবেদন) সংশ্লিষ্ট শাখায় করা হয়। অনুমতির ওই আবেদনটি পরদিন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন ভার্চ্যুয়াল চেম্বার কোর্ট আবেদনটি শুনানির জন্য ৯ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ৯ আগস্ট বিষয়টি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন দুই ভাইয়ের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দুই সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতুবি করেন।

অন্যদিকে হাইকোর্টের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন দুই ভাই। আইনজীবী মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুনও হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করেন।

পৃথক আবেদন দুটি ১৮ আগস্ট চেম্বার কোর্টে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত দুই ভাইয়ের অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। আর আইনজীবীকে হলফনামা করার অনুমতি দেন।

এর ধারাবাহিকতায় হলফনামা করতে অনুমতি চেয়ে দুই ভাইয়ের করা পৃথক আবেদন ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগে ওঠে। সেদিন তাদের আইনজীবী সময়ের আরজি জানালে আদালত ২৭ আগস্ট শুনানির দিন রাখেন। আর আইনজীবী সাইফুল্লাহ মামুনের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) চেম্বার কোর্ট হয়ে আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। এ নিয়ে সব মিলে তিনটি আবেদন তালিকায় ছিল, তা কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ল।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মে গুলশান থানায় ওই মামলা করে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ মে ঘটনাটি ঘটে। পুরো ঘটনাটি ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব নিয়ে। এই ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনের নামে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে ডেকে আনা হয়েছিল। এ সময় জামানত হিসেবে ওই সম্পত্তির বন্ধকি মূল্য কম উল্লেখ করেন ব্যাংকটির এমডি ও অতিরিক্ত এমডি। এরপরই গুলি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির এমডির কাছে একটি সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন। মামলার পর ২৫ মে দুই ভাই নিজেদের মালিকানাধীন আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশনের একটি উড়োজাহাজকে ‘রোগীবাহী’ হিসেবে দেখিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। আইনজীবী সূত্রের তথ্য, ওই মামলায় দুই ভাইয়ের আগাম জামিন চেয়ে গত ২ জুলাই ই-মেইলের মাধ্যমে হাইকোর্টের একটি ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে আবেদন জমা দেওয়া হয়, যার ওপর ২০ জুলাই হাইকোর্টে শুনানি হয়।