রমরমা ব্যবসায় ঝুঁকিতে মানুষ

>

ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজশাহী নগরের লাইন্সেসবিহীন দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন। গতকাল দুপুরে ভদ্রার মোড় এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজশাহী নগরের লাইন্সেসবিহীন দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন। গতকাল দুপুরে ভদ্রার মোড় এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের ২২ জায়গায় নিবন্ধনবিহীন ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা করছেন।

রাজশাহী নগরজুড়েই চলছে অনুমোদনহীন এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। অনুমোদন না থাকায় কোনো শর্ত মেনে চলার দায়ও নেই এসব ব্যবসায়ীর। তাই তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক স্থানে, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা করছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গতকাল বুধবার এসব অনুমোদনহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

আদালত পরিচালনার সময় সঙ্গে ছিলেন বিস্ফোরক পরিদর্শক। দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিস্ফোরক অধিদপ্তর রাজশাহীতে এই অভিযানে অংশ নিল। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসেও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে এ রকম অনুমোদনহীন এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়। গতকালের অভিযান চলাকালে খোলা আকাশের নিচেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে বহু গ্যাস সিলিন্ডার।

গতকাল রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনী খাতুনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিস্ফোরক পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম। রাজশাহী মহানগর পুলিশ এই আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করে।

নিবন্ধনবিহীন দোকানে খোলা আকাশের নিচে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা করার অভিযোগে নগরের ভদ্রা এলাকার মেসার্স সাত্তার জেনারেল স্টোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং নিবন্ধনপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানার টাকা সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা হয়। দোকানের স্বত্বাধিকারী আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি লাইসেন্সের জন্য গত ৭ মার্চ আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনো হাতে পাননি।

এর পাশেই সড়কসংলগ্ন আরেকটি দোকানের সামনে একেবারে খোলা জায়গায় শতাধিক সিলিন্ডার পাওয়া যায়। বিপজ্জনকভাবে এই সিলিন্ডারগুলো রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক পোলের নিচে। এই অবস্থায় সিলিন্ডার দেখে ম্যাজিস্ট্রেট রনী খাতুন বলেন, অনেক সময় বিদ্যুতের তারে স্পার্কিং হয়। তা থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। এদিকে খোলা আকাশের নিচে রাখা এসব সিলিন্ডারের কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। অভিযানের খবরেই তিনি গা ঢাকা দেন। পরে সিলিন্ডারগুলো ওইভাবেই রেখে অভিযান শেষ করা হয়।

একই রকমভাবে খোলা জায়গায় সিলিন্ডার রেখে নগরের সাগরপাড়া, শালবাগান, নওদাপাড়া, শিরোইল, বিনোদপুর বাজার এলাকা এবং শহরসংলগ্ন কাটাখালী বাজারে সিলিন্ডার ব্যবসা চালাতে দেখা যায়। কাটাখালী বাজারের আবাসিক ভবনে তিনটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান চলছে। এসব ব্যবসায়ীর কারোরই গ্যাসের ব্যবসা করার অনুমোদন নেই। জানতে চাইলে সবাই বলছেন, তাঁরা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন।

বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরের ২২ জায়গায় নিবন্ধনবিহীন ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা করছেন। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী এবং লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন আছে এমন ব্যবসায়ী রয়েছেন আরও ১৪৭ জন। নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী খোলা জায়গায় সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, টিনশেডের ঘর হলে লোহার অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে চালা আটকানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কোনো আবাসিক ভবনে এই ব্যবসা করা যাবে না। যে ঘরে সিলিন্ডার রাখা হবে, সেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা (ভেন্টিলেশন) থাকতে হবে। সিলিন্ডার রাখা স্থানের ১০ মিটারের মধ্যে আগুনের কোনো উৎস থাকতে পারবে না।

মাত্র একটি দোকানে অভিযান চালানোর পর তা স্থগিত করা হলো কেন জানতে চাইলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিস্ফোরক পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের লোকবলের সংকট প্রকট। পরিবহন নেই। তাঁর কার্যালয়ে আরও তিনজন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও তা নেই। তিনি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একমাত্র বিস্ফোরক পরিদর্শক। রাজশাহী থেকে বিকেলেই তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে অপর একটি কাজে যাওয়ার জন্য তাঁকে অভিযান সংক্ষিপ্ত করে চলে আসতে হয়েছে।