রাঙামাটির রাজবন বিহারে 'কঠিন চীবরদান' উৎসব
রাঙামাটির রাজবন বিহারে শুরু হয়েছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব ‘কঠিন চীবরদান’। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়। উৎসবে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতের বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও অংশ নিচ্ছেন। এটি রাজবন বিহারের ৪২তম কঠিন চীবরদান উৎসব।
উদ্বোধনের পর চরকায় সুতা কেটে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর (পরার কাপড়) তৈরি কার্যক্রমের সূচনা করেন চাকমা সার্কেলের রানি য়েন য়েন। এ সময় রাজা দেবাশীষ রায় বুদ্ধের নীতি অনুসরণের মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ দান কঠিন কাজকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সহজভাবে করার শিক্ষা দেয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গৌতম দেওয়ান, দীপক খীসা, নিখিল কুমার চাকমা, অংসুই প্রু চৌধুরী।
রাজবন বিহার কঠিন চীবরদান উৎসব পরিচালনা কমিটির তথ্য উপকমিটির আহ্বায়ক সুস্মিতা চাকমা জানান, ৪১ বছর আগে বনভান্তে নামে খ্যাত সাধনানন্দ মহাস্থবিরের প্রেরণায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এ উৎসব শুরু হয়। এটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উৎসব। বৌদ্ধ যুগের আদলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চরকায় তুলা থেকে সুতা বের করে তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করা হয়। এই কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে চীবর তৈরি করা হয়। তারপর তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়। যেকোনো দান বছরের যেকোনো সময় করা যায়। কিন্তু কঠিন চীবরদান করতে হয় আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে।
উৎসবে যোগ দিতে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আসা বিনয় জ্যোতি ভিক্ষু প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে এ পুণ্য কাজের কথা শুনে আসছি। এবার তা বাস্তবে দেখছি। আমাদের কঠিন চীবরদান করা হয় দোকান থেকে কাপড় কিনে। এখানে হাজার হাজার মানুষের পরিশ্রমে বোনা চীবরদান করা হচ্ছে। বৌদ্ধশাস্ত্রে এ ধরনের উৎসবের বর্ণনা পড়েছি।’
কঠিন চীবরদান উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা রাজবন বিহারে এসেছেন। তাঁরা সঙ্গে নিয়ে আসছেন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম গাছে ঝোলানো নগদ টাকা, বই-খাতা, সুঁই-সুতাসহ নানা দানসামগ্রী। অনেকে দল বেঁধে বাদ্য বাজিয়ে, বৌদ্ধধর্মীয় সংগীত গেয়ে বিহার প্রাঙ্গণে আসছেন।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন লহ কান্তি চাকমা জানান, কঠিন চীবরদান উৎসবে যোগ দিতে আসা মানুষের সেবার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। ৩০ জন চিকিৎসক ১ হাজার ৩০০ ব্যক্তিকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিয়েছেন।
উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছে। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শহীদ উল্লাহ জানান, বিহারের চারদিকে সড়ক ও নৌপথের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েনসহ কয়েকটি টহল দল কাজ করছে। এ ছাড়া বিহার প্রাঙ্গণের মূল অনুষ্ঠানস্থলেও বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে বৌদ্ধ সাধকদের চীবর দান করার মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে।