রাজধানীর কমলাপুর পদচারী-সেতুর পাটাতন ভাঙা, ফুটো

এমন অনেক ফুটো আছে পদচারী-সেতুতে। ছবি: লেখক
এমন অনেক ফুটো আছে পদচারী-সেতুতে। ছবি: লেখক

রাজধানীর কমলাপুরে পদচারী-সেতুটি ব্যবহার করেন হাজারো মানুষ। এ সেতু ব্যবহার করেন রাজধানীর কমলাপুর, বাসাবো, মাদারটেক, দক্ষিণগাঁও, নন্দীপাড়া, সবুজবাগ ও খিলগাঁওয় এলাকার মানুষ। এই পদচারী-সেতুর কারণে এসব এলাকার মানুষ মতিঝিল এলাকায় দ্রুত ও অর্থের সাশ্রয় করে চলাচল করতে পারেন। কিন্তু পদচারী-সেতুর বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত মরিচা ধরে সিঁড়িগুলো ও চলাচলের পাটাতনগুলোয় ছিদ্র তৈরি হয়েছে। এ কারণে সেতুটি ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পদচারী-সেতুতে উঠতে–নামতে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হন অনেক পথচারী। বিশেষ করে রাতের বেলা লোহার পাতের সিঁড়ি পার হওয়ার সময় পথচারীরা অসাবধান হলেই পা ফসকে ওই গর্তের মধ্যে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।

সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হলেও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে পথচারীদের। পদচারী-সেতুর সবুজকানন থেকে কমলাপুর অংশ পর্যন্ত অনেক সিঁড়ি ভাঙা নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কমলাপুর রেলওয়ে পদচারী-সেতু ঢাকার অন্যতম বড় পদচারী-সেতু। এই পদচারী-সেতু ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন। সবুজকানন থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর হয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে বাসাবো এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে লোহা, স্টিল ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি পদচারী-সেতুটি।

সবুজকানন এলাকায় পদচারী-সেতু এক প্রান্ত দিয়ে উঠতে লোহার পাতের তৈরি প্রায় ৩৫টি সিঁড়ি পার হতে হয়। সিঁড়িগুলো অত্যন্ত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। সিঁড়িগুলোয় অতিরিক্ত মরিচা ধরে অবস্থা এমন হয়েছে যে পা দিতেই সেগুলো নিচের দিকে দেবে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। লোহার পাতের সিঁড়ির কয়েকটির ডান পাশে, কয়েকটির বাঁ পাশে, আবার কোনটির মাঝখানে ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে চলতে গিয়ে পথচারীদের খুব সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। প্রতিদিন যাঁরা এই পদচারী-সেতু ব্যবহার করছেন, তাঁদের অভ্যাস হয়ে গেলেও নতুন পথচারী এ সেতুতে ওঠার চেষ্টা করলেই মাঝেমধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা। কারণ, ওই নতুন পথচারী জানেন না কোন সিঁড়ির কোথায় পা ফেলতে হবে।

গর্ত ও ফুটোগুলো মাড়িয়ে এভাবে মানুষকে চলতে হয়। ছবি: লেখক
গর্ত ও ফুটোগুলো মাড়িয়ে এভাবে মানুষকে চলতে হয়। ছবি: লেখক

বাসাবোর বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, প্রতিদিন তিনি এই পদচারী-সেতু দিয়ে মতিঝিলে অফিসে করেন। তিনি অবিলম্বে পদচারী-সেতুটি সংস্কারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আশা করছেন। তিনি বলেন, এই পদচারী-সেতু ব্যবহারের কারণে তাঁর সময় ও অর্থ দুটিই বেঁচে যায়।

সরকারি এই চাকরিজীবীর মতো প্রতিদিন হাজারো মানুষ পদচারী-সেতুটি পার হচ্ছেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে পদচারী-সেতুটি দিন দিন মৃত্যুঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই পদচারী-সেতু নিয়মিত ব্যবহার করেন—এমন একজন পথচারী বদরুল হুদা। তিনি বলছিলেন, রাতের বেলা তো চলাই যায় না।

পদচারী-সেতুর পাটাতনগুলোর অনেক জায়গায় এভাবে ভেঙে পড়ে আছে। ছবি: লেখক
পদচারী-সেতুর পাটাতনগুলোর অনেক জায়গায় এভাবে ভেঙে পড়ে আছে। ছবি: লেখক

কমলাপুর প্রান্তে সিমেন্ট–বালুর স্ল্যাব দেওয়া সিঁড়ি বানানো হয়েছে যার অধিকাংশ ঠিকমতো হয়নি। যার কারণে পা দিতেই সেগুলো নড়ে ওঠে। এতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পথচারীরা জানান, বহুল ব্যবহৃত এই পদচারী-সেতু এখনই সংস্কার শুরু না করলে এটা অচল, নাজুক অবস্থায় থেকে আরও ঝুঁকি বাড়াবে। এই অবস্থায় থাকলে শুধু দুর্ঘটনায় আহত নয়, পড়ে গিয়ে পথচারীরা বড় কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও পথচারীরা অবিলম্বে কমলাপুর পদচারী-সেতু মেরামত ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।