রাষ্ট্রপতির ভাষণের 'অসত্য তথ্য' এক্সপাঞ্জের দাবি হারুনের

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। ফাইল ছবি
বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেওয়া ভাষণকে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেওয়া ‘অসত্য তথ্য’ এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানিয়েছেন।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুনুর রশীদ স্পিকারের কাছে এই দাবি জানান। ৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি।

হারুনুর রশীদ বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে। অবাধ এবং সুষ্ঠু দায়িত্ব পালন করেছে। এটা একেবারে অসত্য।

স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হারুনুর বলেন, কার্যপ্রণালি বিধি ও সংবিধানে স্পিকারকে অফুরন্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে যেসব অসত্য তথ্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করা উচিত।

হারুন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি একেবারে শেষে যেটা বলেছেন, সেটা তাঁর মনের কথা। তিনি যথার্থই বলেছেন। জাতীয় সংসদ জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু আপনি এখন বেগম জিয়াকে জেলখানায় ঢুকিয়ে রাখবেন, মৃত্যুপথযাত্রী, তারপরও তাঁর জামিন দেবেন না। সাজা দিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটক রাখবেন, পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে বিরোধী দলকে ঠ্যাঙাবেন। এ দিয়ে জাতীয় ঐক্য, শান্তি-সমৃদ্ধি হতে পারে না।’

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, সংবিধানে বলা আছে জনগণ ক্ষমতার মালিক। কিন্তু এটা এখন স্বপ্নের ব্যাপার হয়ে গেছে। সংবিধানে মৌলিক অধিকারের যে অনুচ্ছেদগুলো আছে, সেগুলোর এখন বেহাল দশা। জনগণ ভীতি–আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।

হারুন বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সরকারের সন্ত্রাস অপতৎপরতা তত বেড়ে যাচ্ছে। তার প্রমাণ বিএনপির প্রার্থী তাবিথের ওপর হামলা। ভিডিও ফুটেজ দেখে কাউকে কি গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে জবাবদিহিমূলক করতে হলে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা দিতে হবে।

হারুন বলেন, শিক্ষা খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও শিক্ষার মান নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু এ জন্য সরকার কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে। পরিবহন খাতে ব্যাপক ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু সড়কে, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা নেই। জনপ্রশাসনে খুবই খারাপ অবস্থা।

হারুনুর রশীদ বলেন, ভারত এনআরসি করার ফলে সীমান্ত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিজিবি সীমান্তে পাহারা দিচ্ছে যাতে ভারত অনুপ্রবেশ ঘটাতে না পারে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় গেল?

ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, উন্নয়নের অনুষঙ্গ হিসেবে দেশে দুর্নীতি-লুটপাটের দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যখন দিনরাত খেটে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন, তখন একদল ইঁদুর-উইপোকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জনগণের সম্পদ লুটে ব্যস্ত।

শিরীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান আরও জোরদার করে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে কালোটাকার মালিক, লুটেরা-দুর্নীতিবাজরা টাকার গরম দেখাতে না পারেন।

সরকারি দলের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজের গতি বাড়াতে হবে। উপজেলা দূরে থাক, অনেক ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়েও সব স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না। আইসিইউ পাওয়া যায় না। আইসিইউ বাড়াতে হবে।

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রমেশ চন্দ্র সেন, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।