রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তাব্যবস্থা ও মান নিশ্চিত করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বুধবার এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও দুর্যোগপ্রবণ দেশে যথাযথ মান এবং মানুষের নিরাপত্তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়েই অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে তেমন হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল সকালে শুরু হওয়া দুই দিনের এই সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অনুমোদিত নিরাপত্তাব্যবস্থা, মান ও অন্যান্য বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করেই রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলোর কোনোটি সামান্য উপেক্ষা করেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সব বিষয়ই আইএইএর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রূপপুর প্রকল্পের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবেন বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। তা ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় দক্ষ জনবল তৈরি, পারমাণবিক বর্জ্য—স্পেন্ট ফুয়েল নিয়ে যাওয়াসহ সব বিষয়ে তারা সহায়তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুরের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে ‘দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পারমাণবিক শক্তির গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার নিকোলভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসচিব রফিকুল ইসলাম এবং আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মো. ফিরোজ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করেছে। এই সেমিনারও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তুতির অংশ। সেমিনারের কারিগরি অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ হলেও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। ভূমিকম্পের বিষয় বিবেচনা করলে এলাকাটি কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে এবং ‘স্ট্যাবল ইন্ডিয়ান প্ল্যাটফর্ম’-এর ওপর অবস্থিত। বন্যার বিষয় বিবেচনা করলে এলাকাটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বন্যাপ্রবাহ এলাকার তুলনায় উঁচু। ১৯৯৮ সাল থেকে সেখানে পদ্মায় ভাঙন নেই। মাকসুদ কামাল বলেন, তবে এলাকাটির চারপাশে কিছু সক্রিয় ভূ-চ্যুতি থাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য এলাকাটিতে নিবিড় সমীক্ষা চালাতে হবে।

রোসাটমের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউ এ সকোলভ বলেন, ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পরও বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। এখনকার তুলনায় ২০৩৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়বে। জাপানও নতুন করে চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। রুশ চিকিৎসাবিজ্ঞান একাডেমির সদস্য অধ্যাপক এ নাজারভ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব সম্পর্কে বলেন, প্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাস, অকারণ ভীতি, তথ্য-উপাত্তের অভাব প্রভৃতি কারণে অনেকে এর বিরোধিতা করেন। রাজনৈতিক বিশ্বাস, ধর্ম ও সংস্কৃতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।  সকোলভ বলেন, তবে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব তথ্য প্রকাশ করে জনগণের আস্থা অর্জন করা যায় এবং সেটা না করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয় না। তাই জনগণকে সব তথ্য জানানোর জন্য তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, ‘পাবলিক কাউন্সিল’ গঠন, বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ প্রভৃতি বাধ্যতামূলক। রূপপুর প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এগুলো করা হচ্ছে। গতকালের দুটি কারিগরি অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান টেকনিকাস রিইউনিডাসের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম কাসানভ, আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য (পরিকল্পনা) এম আলী জুলকারনাইন, পরিচালক মোহাম্মদ শওকত আকবর প্রমুখ বক্তব্য দেন। গতকাল বিকেলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে রোসাটমের পরিচালক (কমিউনিকেশনস) এস নভিকভ বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে তথ্যকেন্দ্র চালু হবে। আজ বৃহস্পতিবার সেমিনারের শেষ দিন।