রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার রোগীর চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি কোবাল্ট-৬০ যন্ত্রটি গত এপ্রিল থেকে নষ্ট। দীর্ঘ ছয় মাস যন্ত্রটির অভাবে রোগীরা যেমন সেবা পাচ্ছে না, তেমনি আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে কোবাল্ট যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। এই যন্ত্রের মধ্যে ‘সোর্স’ নামের একটি গোলাকার যন্ত্রের মাধ্যমে রোগীর দেহে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ওই সোর্সের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এরপরও ওই সোর্স দিয়েই রেডিওথেরাপি দেওয়া হতো।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই সোর্সসহ কোবাল্ট-৬০ যন্ত্রটি এপ্রিল থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিষয়টি একাধিকবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি মেরামত ও নতুন সোর্স বসানোর কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্র জানায়, কোবাল্ট-৬০ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগীর রেডিওথেরাপি দেওয়া হতো। খুবই দরকারি যন্ত্রটি বন্ধ থাকায় রোগীরা বিপদে আছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা। একজন রোগীর এই হাসপাতালে রেডিওথেরাপি দিতে মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হতো। কিন্তু বাইরে সেই থেরাপি দিতেই এক লাখ টাকার ওপর খরচ হয়। ফলে অনেকের পক্ষে এখন আর রেডিওথেরাপি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এই হাসপাতালে একবার রেডিওথেরাপি দিতে ১০০ টাকা নেওয়া হতো। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন ক্যানসার রোগীর রেডিওথেরাপি দেওয়া হতো। সেই হিসাবমতে মাসে গড়ে আয় হতো ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। কিন্তু কোবাল্ট-৬০ যন্ত্র বন্ধ থাকায় সেই আয় হারাচ্ছে সরকার। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন রোগীর রেডিওথেরাপি দিতে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হতো। একই রোগীর হাসপাতালের বাইরে ঢাকায় গিয়ে এই থেরাপি দিতে প্রতি মাসে ব্যয় হয় এক লাখ টাকার ওপরে। এই ব্যয়ভার বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক স্বপন কুমার নাথ বলেন, রোগীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি এ যন্ত্র থেকে যে আয় হতো, এখন সেই আয় ও সেবা দুটিই বন্ধ।
গত রবি ও শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, রেডিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছে। মিঠাপুকুর উপজেলার এক রোগীর স্বজন ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রায় দিন খোঁজ নিবার আসি যন্ত্র ঠিক হইল কি না। অ্যাটে আগোত রেডিওথেরাপি দিছনো। কিন্তু তা বন্ধ হয়া বিপোদোত পড়ছি। রংপুরোত আর কোনোটে এই যন্ত্র নাই যে সেটে চিকিৎসা করামো।’
যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের পরিচালক আ স ম বরকতুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যন্ত্র নষ্ট হওয়ার বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’