রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অশান্তির কারণ জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, প্রায় ১১ লাখ মানুষ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে থাকে। আধিপত্য বিস্তার, মাদকের ব্যবসাসহ সবকিছু মিলেমিশে সেখানে একটি অশান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এসব নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী সব সময়ই কাজ করছে।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এসব কথা বলেন।  তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তারা (রোহিঙ্গা) ভালো থাকুক এবং তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরে যাক।’
গত মাসের শেষ দিকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হন। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে কক্সবাজারের উখিয়ার থাইনখালী রোহিঙ্গা শিবিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ১০ জন আহত হন।

অনুষ্ঠানে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরআন পূজামণ্ডপে রাখার ঘটনা কোনো হিন্দুধর্মের মানুষের কর্ম নয়। সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। যে ছেলেটি এই কাজ করেছে, তাঁকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সে অনেকের নাম প্রকাশ করেছে। আরও কিছু পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই ঘটনাটি উদ্ঘাটন হবে বলে তিনি মনে করেন।
নোয়াখালীর সহিংসতার ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমন নামও শুনবেন, যাঁরা আপনাদের খুবই পরিচিত। রংপুরের ঘটনাতেও নাম আসছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর সব শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে।’

নোয়াখালীর ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে, যারা যারা এই অপকর্ম করেছে, তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এটা চক্রান্ত, একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য চিহ্নিত কয়েকজন নেতা-কর্মী এতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং এগুলোর ব্যবস্থা করেছেন। আমি সব নামই আপনাদের জানাব, আর দু–এক দিনের মধ্যে জবানবন্দি নেওয়া শেষ হলেই। আমরা নামগুলো জেনে গেছি।’
বিভিন্ন স্থানে যাদের নাম আসছে, তারা বিএনপি-জামায়াতের কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো এখনো খোলাসা করে বলিনি বিএনপি না জামায়াত। আমি বলেছি, আমরা নামধাম পাচ্ছি। একটু ধৈর্য ধরেন, একদম সঠিক হয়ে আপনাদের জানাব। তবে আপনি যেটা অনুমান করছেন, আমরা সে রকমই শুনছি।

তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বলছি না। কারণ, আমরা আরও নিশ্চিত হতে চাই।’
কয়েকটি জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নেতা-কর্মীর নামও এসেছে। এ বিষয়ে দলীয় ও মন্ত্রী হিসেবে তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপরাধী, অপরাধীই। আমরা কোনো অপরাধীকেই ছাড় দিই না। তিনি জনপ্রতিনিধি হোক বা অনেক প্রভাবশালী লোকই হোক। যেখানে যিনি সম্পৃক্ত, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখানেও নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাঁদের নাম আসছে, তাঁরা যদি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে ছাড় পাবেন—এমন কোনো কথাই থাকবে না।’

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির কাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কবে থেকে শুরু হবে—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনের কিছু জটিলতা আছে। সে জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে স্পষ্টীকরণ চাওয়া হয়েছে। তারা মতামত দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তপন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।