রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি বাংলাদেশে করার প্রস্তাব

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মামলার শুনানি আংশিকভাবে অথবা অভিযোগ গঠনের শুনানির পুরোটাই বাংলাদেশে আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সচিবালয় দ্য রেজিস্ট্রি স্বাগতিক শহর দ্য হেগের বদলে রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোনো জায়গায় এই শুনানি অনুষ্ঠানে তার পর্যবেক্ষণ আদালতে পেশ করেছে। পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে শুনানি আয়োজনের সম্ভাব্য পাঁচটি ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি এখন আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ৩–এর তিন বিচারপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।

২১ সেপ্টেম্বর আইসিসির রেজিস্ট্রি তাদের পর্যবেক্ষণ পেশ করে। আদালতের প্রকাশিত রেকর্ডে অবশ্য দেখা যায়, বাংলাদেশে শুনানি অনুষ্ঠান প্রশ্নে নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে দুটি গোপন সংযুক্তিও পেশ করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী তিনটি গ্রুপের পক্ষে গত ৪ আগস্ট আইসিসিতে একটি আবেদন পেশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছাকাছি কোনো জায়গায় শুনানি অনুষ্ঠানের আবেদন জানানো হয়, যাতে তাঁরা সাক্ষ্য দেওয়া এবং সহজেই মামলার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির দপ্তর আবেদনটির বিরোধিতা করে তা খারিজ করার অনুরোধ জানায়। তবে প্রি-ট্রায়াল চেম্বার গত ১৭ আগস্ট আবেদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য আদালতের রেজিস্ট্রারের দপ্তরকে নির্দেশ দেন।

রেজিস্ট্রির পর্যবেক্ষণে যে পাঁচটি সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: ১. চেম্বার বা একজন মনোনীত বিচারপতি বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির সফর করবেন। ২. রোম স্ট্যাটিউটের ৫৬ ধারা অনুযায়ী চেম্বার অথবা মনোনীত একজন বিচারপতি ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থানরত সাক্ষীর সাক্ষ্য নেবেন। ৩. চেম্বার অথবা একজন বিচারপতি বাংলাদেশে অবস্থানরত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তাঁদের অংশগ্রহণের বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন। ৪. অভিযোগ গঠনের পূর্ণ শুনানি বাংলাদেশে অনুষ্ঠান এবং ৫. অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে ঘোষণার ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি, কোভিড–১৯ সংক্রমণের বাস্তবতা, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে সময় ও সম্পদ কতটা প্রয়োজন হবে, তা আরও বিশদভাবে যাচাই করা প্রয়োজন বলেও রেজিস্ট্রির তরফে আদালতকে জানানো হয়েছে। এ রকম শুনানির জন্য যে ধরনের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে আদালতে অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং, তাৎক্ষণিক ভাষান্তর বা ইন্টারপ্রেটেশন, পাবলিক গ্যালারি, আদালতকক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রদর্শনের ব্যবস্থা। এ ছাড়া আদালতের দুটো ভাষা ইংরেজি ও ফরাসি ছাড়াও বাংলা, রোহিঙ্গা এবং বর্মি ভাষায় আদালতের কার্যক্রম ভাষান্তরের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় আদালতে কোনো মিডিয়া সেন্টার না রাখার প্রস্তাব দিয়েছে রেজিস্ট্রি।

মামলার শুনানিতে যে পাঁচটি সম্ভাব্য উপায়ে ভুক্তভোগীদের সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে, তার প্রতিটির জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন হবে, এই পর্যবেক্ষণে তা আলাদাভাবে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অভিযোগ গঠনের পূর্ণ শুনানি আয়োজনে যেসব প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত ব্যাপক এবং সময়সাপেক্ষ। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রুলস অব প্রসিডিউর অ্যান্ড অ্যাভিডেন্সের ১০০(৩) বিধি অনুযায়ী, সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ের যেটিই আদালত গ্রহণ করবেন, তার জন্য বাংলাদেশের সম্মতি এবং সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারকাজ এশিয়ায় স্থানান্তরের পক্ষে আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা সম্প্রতি বেশ জোরেশোরেই আলোচনা শুরু করেছেন। দ্য রোহিঙ্গা: ইনসাইড মিয়ানমারস জেনোসাইড বইয়ের লেখক ড. আজম তামিমি সম্প্রতি আরব নিউজ–এ লিখেছেন, এশিয়ায় এ ধরনের বিচারকাজ অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত জায়গা হতে পারে সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়া।