রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার বিচার দাবি অ্যামনেস্টির

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন মুহিবুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনার বিচার দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি বলেন, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ শরণার্থীশিবিরে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদ করতেন। তিনি মানবাধিকার ও শরণার্থীদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করতেন। তাঁকে হত্যার ঘটনায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিনি মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনার বিচার দাবি করেন। হত্যার ঘটনায় জড়িত সবার শাস্তি দাবি করেন।

অ্যামনেস্টি বলেছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে সহিংসতার ঘটনা চলমান সংকট। রোহিঙ্গা শিবিরে সহিংসতার ঘটনা এড়াতে সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।
মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে একদল দুর্বৃত্ত মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাই।’ এর আগে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহকে রোহিঙ্গারা ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ’ বলে ডাকত। মিয়ানমারে থাকতে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, নিরাপত্তা, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ সাত দফা দাবি পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এখনো ওই দাবিতে অনড় রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসে আট লাখ রোহিঙ্গা। সেই সময় বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এ দেশে এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ।