রোহিঙ্গারা পুরো পরিবেশ নষ্ট করছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গারা পুরো পরিবেশ নষ্ট করছে। উখিয়া ছিল ঘন জঙ্গল। এখন ন্যাড়ামাথা হয়ে গেছে, কোনো জঙ্গল নেই। রোহিঙ্গারা নারী ও শিশু পাচার, মাদক পাচারসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হচ্ছে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার তাঁর সাম্প্রতিক জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। বিকেলে গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেন এবং সাংবাদিকদের অপর একটি অংশ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে উপস্থিত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রশ্নোত্তরপর্বে সংযুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে হয়, রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের লাভই হয়। অনেক প্রস্তাব আসে রোহিঙ্গাদের জন্য, এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই যান মিয়ানমারে, ওখানে ঘর করেন, ইশকুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়, (তাদের কাছে) সবকিছুতেই যেন একটা ব্যবসা।’
ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বলেছি, আপনারা এখন কেন ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি, নানা সমস্যা হচ্ছে। এদের না ফেরাতে পারলে সমস্যা আরও হবে। রিফিউজি পালতে পারলেই কোনো কোনো সংস্থার জন্য ব্যবসা। এরা না থাকলে তাদের চাকরি থাকবে না।’
কীভাবে ভাঙল সেটা দেখলেন না
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘর ভেঙেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাঙা পিলারের ছবি দেখলেন, কীভাবে ভাঙল সেটা দেখলেন না। ৯টি জায়গায় ঘর নির্মাণে দুর্নীতি পাওয়া গেছে, যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। করোনার সময় এসব ঘর তৈরি করতে গিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ লাখ মানুষকে ঘর দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা দিয়ে ফেলেছে, তাই প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে।
ভয় পেলে ভয়, ভয় না পেলে কিছু না
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করেছে। সেটি নিয়ে বাংলাদেশের ভয়ের কিছু আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভয় পেলে ভয়, ভয় না পেলে কিছু না। একসময় আফগানিস্তানে তালেবান শাসন ছিল, তখন দেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তানে যায়। দেশে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। আবার জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হলে নিশ্চয়ই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
কোথাও অশান্তি হলে সেটা পীড়াদায়ক
সার্ক অকার্যকর। আফগানিস্তানে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় কী উদ্যোগ নেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্রনীতি স্পষ্ট। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা না। কোথাও অশান্তি হলে ভয় হয়, সেটার ঢেউ না আবার আমাদের দেশে এসে পড়ে। দেশের অতীত ইতিহাস তো ভালো না। নানা সময়ে নানা চক্রান্ত হতে থাকে। ২০০৮ সাল থেকে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যেও বারবার আঘাত এসেছে। সবগুলো সামাল দিয়েছি। কোথাও অশান্তি হলে সেটা পীড়াদায়ক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরে শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক, সেটাই চাই।
টাকা বানানোর জন্য প্রতারণা, শাস্তি হবে
বিভিন্ন সময়ে ইভ্যালি, ই–অরেঞ্জ, ইউনিপে–টু, যুবকের মতো হায় হায় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ মানুষের টাকা চলে গেছে। সেসব টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। টাকা কোথায় রেখেছেন, কোথায় পাচার করেছেন সেগুলো তদন্ত হচ্ছে। মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য প্রতারণা করছে, এদের অবশ্যই শাস্তি হবে।
ব্রিটিশ সরকার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে
বঙ্গবন্ধুর নাতনি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। রাজনৈতিক চিরকুট দেওয়া ছিল। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের অনেকে লন্ডনে বাস করছে। যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, তারা এখনো তৎপর কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ এমপির গাড়িতে হামলা, সেটি ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব, তারা দেখবে। এমন ঘটনা যারা ঘটায় তারা কেমন মানুষ সেটা বাংলাদেশের মানুষ বিচার করে দেখুক। ইংল্যান্ডের মতো সভ্য দেশে এমন অসভ্য ঘটনা ঘটে। সেখানে কিছু লোক আছেই সারাক্ষণ বিরুদ্ধে লেগে থাকার জন্য। সেখানে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা দুঃখজনক, কাউকে দোষারোপ করছি না। ব্রিটিশ সরকার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
আত্মতুষ্টিতে বসে থাকব না
মাঠে প্রতিপক্ষ নেই। যারা আছে তারা ছিন্নভিন্ন। তাহলে এত আগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলছেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। কখনো আত্মতুষ্টিতে ভুগি না, এত কাজ করেছি, প্রতিপক্ষ নেই। তাহলে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের মতো অবস্থা হতে পারে। নির্বাচনকে নির্বাচন হিসেবেই দেখতে চাই। জনগণের আস্থা অর্জন করে, জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় আসতে চাই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি নেওয়া, ভোটের রাজনীতিতে মানুষের কাছে যাওয়া। বিরোধী দল নেই বলে আত্মতুষ্টিতে বসে থাকব না।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন
আগামী নির্বাচন কমিশন কি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে হবে, নাকি সার্চ কমিটির মাধ্যমে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করবেন, তার মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় অনীহা
দেশে বিশ্বমানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপিত হচ্ছে। অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করতে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণায় বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্যজনক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন যেন গবেষণায় অনীহা। অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আরেকটা চাকরি করেন। ওই সময়টা গবেষণায় কাজে লাগান না। বিশেষ ফান্ড করা হয়েছে গবেষণার জন্য। গবেষণায় অনীহা কেন জানা নেই, এটাই বাস্তবতা।’