র্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসেও ছড়াচ্ছে করোনা

পুলিশের পাশপাশি র‍্যাব, আনসার বাহিনী ও পরিষেবা সংস্থা ফায়ার সার্ভিসে করোনা ভাইরাসের কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ বাহিনীতে আরও ২৮৬ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আজ শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৪৪ জন ও র‍্যারে প্রায় ৬০০ সদস্য। এ ছাড়া আজ পর্যন্ত আনসার ও ভিডিপিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩২৮ ও ফায়ার সার্ভিসে ৯৭ জন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত চার হাজার ৫৪৪ জন সদস্য পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৫৩০ জন। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে চার হাজার ৭৩৮ জন পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গ নিরোধ) ছিলেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) আছেন এক হাজার ৯৭ জন। আজ পর্যন্ত এক হাজার ৫৬৩ জন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ডিএমপিরই আটজন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) সোহেল রানা আজ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৩৪.৩৯ শতাংশ। সুস্থ হয়ে ওঠা পুলিশ সদস্যদের বেশীরভাগ ইতিমধ্যে দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য সর্বোত্তম সেবা ও শুশ্রুষা নিশ্চিত করায় পুলিশে আক্রান্তের হার যেমন কমছে, তেমনি দ্রুততার সঙ্গে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরাও সুস্থ হয়ে উঠছেন।

এ ছাড়াও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট-র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‍্যাব) করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০০। আক্রান্তের বেশিরভাগই র‍্যাব সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে কর্মরত। আক্রান্ত অধিকাংশ সদস্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ইমপালস হাসপাতাল, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও বসুন্ধরা কনভেনশন করোনা সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
এ ছাড়া র‍্যাব নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে করোনায় আক্রান্ত বেশ কিছু সদস্যকে র‍্যাবের আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) রেখেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল আহমেদ (অভিযান)। দুই মাস আগ থেকে র‍্যাব নিজস্ব উদ্যোগে জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর যন্ত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিপালস মিটার সংগ্রহ করে রেখেছিলও বলে জানান তিনি।


র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে জানান, করোনা পরিস্থিতিতেও মাদক বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে র‍্যাব সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে অভিযান থেমে নেই। র‍্যাব সদস্যরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। একেক ভাগ টানা সাতদিন করে কর্তব্য পালন করে তারা সাতদিন বিশ্রামে থাকছেন। তিনি বলেন, আক্রান্তদের করোর অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়। করোনায় আক্রান্ত র্যাব সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে ২৫০-৩০০ শয্যার আরেকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) ও করোনার পরীক্ষাসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা থাকবে।

এদিকে আজ বিকেল পর্যন্ত আনসার ও ভিডিপিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩২৮ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকায় ২৭৩ জন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৫ আক্রান্ত হন।আজ আনসার ও ভিডিপির (গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী) সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন আনসার বাহিনীর একজন উপমহাপরিচালক, ১০২ জন ব্যাটালিয়ন আনসার, ২১৯ জন অঙ্গীভূত আনসার, একজন বিশেষ আনসার, একজন সিগন্যাল অপারেটর, একজন নার্সিং সহকারী, দুজন নারী আনসার ও একজন ভিডিপি সদস্য। আক্রান্তদের মধ্যে ৮১ জন ব্যাটালিয়ন আনসার জাতীয় সংসদ ভবনে, এবং ১৬৫ জন অঙ্গীভুত আনসার ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন। বাকিরা আনসার সদর দপ্তর ও বিভিন্ন জেলায় কর্মরত। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৪ জন সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন। এখন পর্যন্ত অঙ্গীভুত আনসারের একজন প্লাটুন কমান্ডার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

বাহিনীর উপপরিচালক (যোগাযোগ ও গণসংযোগ) মেহেনাজ তাবাসসুম আজ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৫১২ জন আনসার সদস্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ও ১৩ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদের করোনায় আক্রান্ত আনসার সদস্যদের চিকিৎসায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. রায়হান আজ প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ১০ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের সবার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাদের অবস্থার অবনতি হলে তাদের আইসোলেশনে রাখা হবে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।