লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে চলাচল বেড়েছে

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল খুবই কম। মোড়ে মোড়ে যানবাহন থামিয়ে চেক করছে পুলিশ। প্রধান প্রধান সড়কগুলোকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আবার কোনো কোনো সড়কপথ ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে চলাচল করা ব্যক্তিদের খানিকটা পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের সড়কে রিকশার দাপট দেখা গেছে। তবে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল বেশি। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলতে দেখা গেছে। ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে চেকপোস্টের সামনে গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গেছে।

সারা দেশে আট দিনের লকডাউন চলছে। তবে প্রথম দিন সরকারি ছুটি থাকায় মানুষের চলাচল কম ছিল। আজ বৃহস্পতিবার ব্যাংক, শেয়ারবাজার, শিল্পকারখানা খোলা রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চলাচাল বেড়েছে।

ঢাকায় ফার্মগেট, প্রগতি সরণি, রোকেয়া সরণি, মতিঝিল, মিরপুর রোডে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে গাড়ির চাপ ছিল। অফিশিয়াল গাড়ি, মুভমেন্ট পাস, অফিস আইডি কার্ড চেক করছিলেন পুলিশের সদস্যরা। ফার্মগেটে সড়কের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা দিয়ে চলাচল করা গাড়ি, মোটরসাইকেল ও সিএনজিগুলোকে চেক করা হচ্ছিল। একজন যুবককে দেখা গেল মোটরসাইকেল রেখে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশ জানান, ওই যুবকের মুভমেন্ট পাস বা জরুরি সেবার অফিশিয়াল পরিচয়পত্রও নেই। এ কারণে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে না পারলে জরিমানা করা হবে বলে জানান সেখানে দায়িত্বপালনরত পুলিশের এক সদস্য। তবে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেল, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাঁরা চলাচল করছেন, তাঁরা যৌক্তিক কোনো না কোনো পরিচয়পত্র দেখাচ্ছেন বা মুভমেন্ট পাস দেখাচ্ছেন।

Hasan Raja

ঢাকার শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, গাবতলী এলাকায়ও ছিল প্রায় একই চিত্র। বিভিন্ন সড়কে জব্দ করা রিকশা উল্টিয়ে রাখা হয়েছে। তবে যাঁরা হেঁটে চলাচল করছেন, তাঁদের খুব একটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে না।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সড়ক ফাঁকা। জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া বেশির ভাগ লোকজন রিকশা করে যাতায়াত করছেন। তবে মাঝেমধ্যে দু-একটি ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা যাচ্ছে। অপ্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে ঘরে ফেরাতে রাস্তায় রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

নগরের অন্যতম প্রবেশপথ সিটি গেট। সেখানে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা গেছে, আশপাশের দোকানপাট বন্ধ। পুরো সড়কই ফাঁকা। মাঝেমধ্যে দু-একটি রিকশা চলাচল করছে। অলঙ্কার মোড় এলাকায় বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাসগুলোর কাউন্টার। লোকে লোকারণ্য থাকা এ এলাকায় নেই আগের চিত্র।

একই চিত্র নগরের অন্যতম টাইগারপাস মোড় এলাকায়। সকাল ১০টার দিকে সেখানে দেখা গেছে, রিকশা ছাড়া কিছু নেই। মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তাঁরা রিকশায় করে যাতায়াত করা যাত্রীদের কাছে কারণ জানতে চাচ্ছেন। যথাযথ কারণ ছাড়া বের হলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রিকশায় করে লালখান বাজার থেকে আগ্রাবাদ মা-শিশু হাসপাতালে যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী বিলকিস আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিগুণ ভাড়ায় হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। জরুরি সেবার মধ্যে পড়লেও যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই।

নগরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেট মোড়। আজ বেলা ১১টার দিকে সেখানে দেখা যায় ফাঁকা। বন্ধ দোকানপাট। রিকশা ছাড়া চলাচল করছে না অন্য কোনো যান।

নগর পুলিশের উপকমিশনার ট্রাফিক (উত্তর) মো. আলী হোসেন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, অপ্রয়োজনে লোকজন যাতে রাস্তায় না আসেন, সে জন্য নগরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রয়েছেন। কারণ ছাড়া আসা লোকজনকে ফিরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বেশ কিছু গাড়ি আটক করা হয়েছে।

এ দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৩৩ মামলায় ১৯ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আজ বৃহস্পতিবারও জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় আটক ৩০

নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা মসজিদে গতকাল রাতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মসজিদের বাইরে জড়ো হয়ে ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৩০ জনকে আটক করে পুলিশ।

জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদের বাইরে এসে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ওই সময় তাঁরা মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আরেকটি জামাতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরে পুলিশ সেখান থেকে ৩০ জনকে আটক করে রাতে থানায় নিয়ে আসে। যাচাই–বাছাই করে ২৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৬০ থেকে ৭০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাঁরা কেউ মুসল্লি নন। মসজিদে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।