‘ফারাজের এক অজানা স্বপ্নপূরণ’

নানা লতিফুর রহমানের সঙ্গে ফারাজ আইয়াজ হোসেন।
সংগৃহীত

ফারাজ আইয়াজ হোসেনের ইচ্ছা ছিল তাঁর নানা লতিফুর রহমানের জীবনের কথা সবাইকে জানানোর। এ জন্য তিনি উইকিপিডিয়া ও ফেসবুকে প্রচারের চেষ্টাও করেছিলেন। বিভিন্ন কারণে সেসব আর এগোয়নি। ঠিক যেদিন ফারাজ প্রাণ হারান, চার বছর পর তাঁর নানাও একই দিনে মারা যান। নানা ও নাতির মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে প্রথম আলো চালু করল লতিফুর রহমানের নামে একটি ওয়েবপেজ (https://www.prothomalo.com/latifur-rahman) । ফারাজের এ ইচ্ছার কথা সবার মতো প্রথম আলোর কাছেও ছিল অজানা।

লতিফুর রহমান
প্রথম আলো

ফারাজের অজানা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার কথা বলছিলেন তাঁর বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন। লতিফুর রহমানকে স্মরণ করতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে যারেফ বলেন, ‘প্রথম আলো নানার খুব কাছের প্রতিষ্ঠান ছিল। ফারাজকে হারানোর পর কোনো দিন এই দিনটিতে প্রথম আলো আমাদের মন খারাপ হতে দেয়নি। প্রতিবারই মন ভালো করার কিছু করেছে। তাঁদের দুজনকেই আমরা এই দিনে হারিয়েছি এবং খুশি হয়েছি, এদিনেই ওয়েবসাইটটি শুরু হলো।’

যারেফ আয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রথম আলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জোর দিয়েছে। আর এই ওয়েবপেজ থেকে দেশের তরুণেরা নানার (লতিফুর রহমান) কাজ ও উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন, উৎসাহ পাবেন।’

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১ জুলাই। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের এই দিনেই গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তাঁর নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন। লতিফুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রথম আলো আজ তাঁর নামেই একটি ওয়েবপেজ করেছে।

এ উপলক্ষে অনলাইনে হওয়া অনুষ্ঠানে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে সিমিন রহমান বলেন, ‘আব্বুর কাছে স্মৃতি ধরে রাখা, ডকুমেন্টেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি এটা ভীষণ পছন্দ করতেন। তিনি চিঠি স্ক্যান করে রাখতেন, বেড়াতে গেলে টিকিট সংরক্ষণ করতেন। আবার বলতেন, একদিন আমাদের সবাইকে সব ছেড়ে যেতে হবে। এখন বুঝি, তিনি কেন স্মৃতি জমাতেন।’

সিমিন রহমান আরও বলেন, ‘আব্বু যা করতেন, আপনারা (প্রথম আলো) সেটাই করছেন। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণ করে পৃথিবীকে জানাচ্ছেন। আব্বু ব্যবসার ক্ষেত্রে যে সততা ও মর্যাদার উদাহরণ রেখে গেছেন, তা যেকোনো মানুষকেই উৎসাহ দেবে।’
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বিশ্বের লাখো মানুষের কাছে প্রতিদিন পৌঁছায় প্রথম আলো। এটি সম্ভব হয়েছে লতিফুর রহমানের কারণেই। তিনি যে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কথা বলতেন, সেটি নিয়েই প্রথম আলো আরও ১০০ বছর টিকে থাকুক, এটাই চাওয়া।

ফারাজ আইয়াজ হোসেন

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, লতিফুর রহমান নিজের জীবনে আর আটকে নেই। তিনি নেই, তবে তিনি অসংখ্য মানুষের মনে বেঁচে আছেন। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যে পথ তিনি দেখিয়েছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে, ব্যবসায়ী হিসেবে যে পথ তিনি রচনা করেছেন, তা অসামান্য। সাজ্জাদ শরিফ আরও বলেন, ‘লতিফুর রহমানের জীবন ও অগ্রযাত্রা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে এই ওয়েবপেজ করা হয়েছে। আমরাও জানতাম না এটা ফারাজের স্বপ্ন ছিল। কাকতালীয় বিষয়, মিলে গেল।’ সামনে বড় আয়োজন করে এই ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে শুরুতে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম আলোর সম্পাদক থেকে শুরু করে অফিস সহকারী—সবাই লতিফুর রহমানকে মন থেকে শ্রদ্ধা করি। তাঁর কাজ, গুণ, নৈতিকতা, বিনয়, অন্যকে সম্মান দেওয়ার প্রবণতা আমাদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দেয় সব সময়।’

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, আনিসুল হকসহ প্রথম আলোর বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।