লালমনিরহাট কারাগার থেকে জঙ্গিদের স্থানান্তরের সুপারিশ

লালমনিরহাট জেলার ম্যাপ

লালমনিরহাট কারাগারে জঙ্গিগোষ্ঠীর বিশ সদস্যকে কোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে স্থানীয় পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার জেলা পুলিশ একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখায়। ওই প্রতিবেদনেই বন্দীদের স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে জেলা প্রশাসক ও জেল সুপারের কাছে ফোন আসে। এর আগে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য পরিচয়ে তাঁদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষ আর কোনোভাবেই তাঁদের সঙ্গী-সাথিদের আটকে রাখতে পারবে না, তারা ছিনিয়ে নেবে—এই ছিল চিঠি ও মুঠোফোনে দেওয়া বার্তার সারাংশ। এর পরপরই সারা দেশের কারাগারগুলোয় সতর্কতা জারি করা হয়। তবে উড়োচিঠি বা মুঠোফোনে হুমকির ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

এই ঘটনায় লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোকে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার পুলিশের বিশেষ শাখায় জেলা পুলিশের পাঠানো প্রতিবেদনে বন্দীদের স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো চিঠিতে কারামহাপরিদর্শক মোস্তফা কামাল পাশা লেখেন, কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে বন্দী পালানোসহ যেকোনো দুর্ঘটনা কঠোরভাবে দমন করা সব কারাকর্মকর্তা/কর্মচারীর প্রধানতম দায়িত্ব। অথচ সম্প্রতি কিছু কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

চিঠিতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেন কারা মহাপরিদর্শক। সেখানে জেলারের নেতৃত্বে একজন ডেপুটি জেলার, একজন প্রধান কারারক্ষী ও পাঁচজন কারারক্ষীর সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে। আগে শাস্তি পাননি এমন কারারক্ষীদের এই দলে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সেখানে। তা ছাড়া কারাগারের ফটকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ও হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে যথাযথভাবে তল্লাশি চালাতে বলা হয়েছে। বন্দী জঙ্গিদের কঠোর নজরদারির আওতায় আনা ও পুলিশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার কথাও উল্লেখ করা হয় সেখানে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপারসহ জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা কারাগার পরিদর্শন করেছেন এবং কারা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি কারাগারকেন্দ্রিক নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে পুলিশ।

তবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, লালমনিরহাটে দুর্ধর্ষ কোনো জঙ্গি নেই। দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সাধারণত কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়। তা ছাড়া এর আগেও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো কারারক্ষীদের ওপর হামলা ও পুলিশকে হুমকি দিয়েছে। তবে তার ধরন ছিল আলাদা।

এ দিকে মাদক সংশ্লিষ্টতার দায়ে সম্প্রতি লালমনিরহাট কারাগার থেকে কয়েকজন কারারক্ষীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না সেটাও দেখা দরকার বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তবে মাদক সংশ্লিষ্টতার দায়ে কাউকে বদলি করা হয়েছে কি না জানতে লালমনিরহাট জেল সুপারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।