বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্দা উঠল ‘মুজিব চিরন্তন’-এর

‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথিরা। আজ বিকেলে প্যারেড গ্রাউন্ডে
ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

সাদা পর্দায় বঙ্গবন্ধুর হাস্যোজ্জ্বল মুখ। চোখে চশমা পরা পরিচিত সেই ছবি। তাঁর হাসিমুখের পেছনে যেন নদীর ঢেউয়ের খেলা। মঞ্চের ওপর পাঁচটি সিঁড়ি যেন বাংলাদেশের পাঁচটি দশক পেরোনোর প্রতীকী নিদর্শন! এভাবেই সাজানো ‘মুজিব চিরন্তন’ আয়োজনের মঞ্চের সজ্জা। মঞ্চের ঠিক সামনেই ফুল দিয়ে সাজানো ও লেখা ‘মুজিব ১০০’।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের অনুষ্ঠান মুজিব চিরন্তন শুরু হয় আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে।

করোনাভাইরাস মহামারিকালে মুখে মাস্ক পরে শিশুরা জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু করে তাদের পরিবেশনা এবং একে একে কয়েকটি দেশের গান শোনা যায় তাদের কণ্ঠে। ‘আমি জাতির পিতার স্বপ্নের দেশে জন্ম নিয়েছি’ গানটি দিয়ে শেষ হয় শিল্পকলা একাডেমির শিশুদের এই পরিবেশনা।

এরপর সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা শুরু করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ মঞ্চে আসন নেন। এ সময় তাঁদের সবার মুখে ছিল মাস্ক। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বোন শেখ রেহানাও ছিলেন অনুষ্ঠানে।

এরপর কোরআন তিলাওয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করার পর পরিবেশন করা হয় একটি ভিডিও অ্যানিমেশন এবং মুজিব শতবর্ষের থিম সং।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সশরীর যোগ না দিলেও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালিও ভিডিও বার্তা পাঠান।

এরপর কোরআন তিলাওয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করার পর পরিবেশন করা হয় একটি ভিডিও অ্যানিমেশন এবং মুজিব শতবর্ষের থিম সং।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, গুণগতভাবে রাজনীতিতে কতটা পরিবর্তন ঘটেছে, সে ব্যাপারে ভাবতে হবে। তবে আজকাল কিছু সুযোগসন্ধানী রাজনীতিকে তাঁদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় রাজনীতি বিপরীত দিকে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ অদম্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, তারা এখনো দেশে–বিদেশে সক্রিয় এবং দেশের অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়।

তবে ‘এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে সহজে নামানো যাবে না। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।’

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মহামানব অভিহিত করে বলেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রত্যাশী মানুষের হৃদয়ে তিনি একটি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।

মোহাম্মদ সলিহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের অন্যতম মহামানব, যাঁর কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জনগণের স্বতন্ত্র নিয়তি নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।’

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশেষত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাঁর ‘দক্ষতা ও মহতী ঐতিহাসিক অবস্থান’-এর প্রমাণ, যাতে কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। যে কারণে ইউনেসকো এটিকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে’ দালিলিক ঐতিহ্য হিসেবে নথিভুক্ত করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসাও করেন সলিহ। করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদশ থেকে মেডিকেল টিম পাঠানোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমরা যে বন্ধুত্ব উপভোগ করছি, তার জন্য মালদ্বীপ কৃতজ্ঞ।’

মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন সলিহ। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায়ও বাংলাদেশকে সহায়তার আগ্রহের কথা জানান তিনি।

১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার থিম ‘মুজিব চিরন্তন’ হলেও প্রতিদিন অনুষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন থিম রয়েছে এবং উদ্বোধনী দিনের থিম ছিল ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন।