শহরে সবজি চাষ
খেতে রয়েছে বাঁধাকপি। আছে লাউ, মুলা, পালংশাকও। এক মনে কাজ করছেন শহুরে কিষান, কিষানের বউ। চিরপরিচিত গ্রামের কোনো খেতের দৃশ্য এটি নয়। এমন তরতাজা সবজির খেত আছে খোদ রাজধানীতেই।
রাজধানীর একেবারে ভেতরে খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, কমলাপুরের টিটিপাড়া, মতিঝিলের বিভিন্ন কলোনি, মুগদার মান্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে আছে সবজিখেত। এসব খেত থেকে তরতাজা সবজি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে। শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্য সময়েও চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি খেত আছে মান্ডায়।
সরেজমিনে দেখা গেল, উত্তর মান্ডার বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে সবজির খেত। এর মধ্যে বাঁধাকপি খেতের কোথাও ছাউনি দিয়ে এর পরিচর্যা করছেন কৃষক। কোথাও সেচের জন্য নালা কাটা হচ্ছে। কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জমির মাটি আলগা করছেন কেউ কেউ। কোথাও চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের শাক।
মান্ডার একটি খেতে কাজ করছিলেন আতোয়ার আলী (৫০) ও তাঁর স্ত্রী সায়েরা খাতুন (৪০)। দুজনে বলেন, দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। সাথি ফসল হিসেবে লালশাকও বুনেছেন। বাঁধাকপির গাছ বড় হয়ে যাওয়ায় লালশাক তুলে ফেলা হচ্ছে। এই শাক বাজারে নিয়ে বিক্রি করবেন আবার নিজেরাও খাবেন। পাইকারদের কাছে শতক হারে বাঁধাকপি বিক্রি করা হবে। সবজির এই খেতের জমিটি একটি আবাসন কোম্পানির। তাঁদের স্থানীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে এই জায়গায় আবাদ করছেন তাঁরা। সবজি বিক্রির পর লাভ যা থাকে, তাঁর একটা অংশ কোম্পানিকে দেন তাঁরা। তারপরও ভালো লাভ হয়।
কথা হয় ফজলুল হকের (৪২) সঙ্গে। প্রায় তিন বিঘা জমিতে লালশাক চাষ করেছেন তিনি। বললেন, কোম্পানির কাছ থেকে তিনিও জমি নিয়েছেন। ফসল তুলে কিছু লভ্যাংশ দেবেন। এখান থেকে পাইকারেরা শাক কিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন। প্রতি শতক জমির লালশাক হাজার দশেক টাকায় বিক্রি করেন। লাভ ভালোই থাকে।
আবাসন কোম্পানির স্থানীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, এখানে কোম্পানির প্রায় দেড় শ একর জমি খালি পড়ে রয়েছে। প্রকল্পের যেসব জায়গা এখনো খালি পড়ে রয়েছে, সেখানে স্থানীয় কৃষকদের চাষ করার জন্য নামমাত্র টাকায় ইজারা দেওয়া হচ্ছে। কোম্পানির কাজ শুরু হলে জমি ফেরত নেওয়া হবে।
খিলগাঁও এলাকায় সবজি চাষ করেন জহুরা বেগম (৩৫)। প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলোনির জমিতে পালংশাকের খেত করেছি। স্বামী রিকশা চালাতে বাইরে যান। আমি খেতে কাজ করি। শীত ছাড়াও বছরের অন্য সময়ও নানা ফসলের চাষ করি। এতে নিজের পরিবারের জন্য তাজা তরকারির চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রিও করা যায়।’
মোহাম্মদপুর এলাকার চাষি মো. রানা বলেন, ‘কাজের ফাঁকে খেতে সবজি চাষ করি। নিজেই জমিতে নালা কেটে সেচের ব্যবস্থা করি। খেতের সবজি খুব একটা বিক্রি করা হয় না। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝেমধ্যে সবজি সরবরাহ করি। নিজে খাই, অন্যকেও খাওয়াই। সবাই মজা করে আমাদের বলেন, শহুরে চাষি।’