শহিদের সাংসদ পদ নিয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার

শহিদ ইসলাম

কুয়েতের আদালতে সাংসদ মো. শহিদ ইসলামের সাজা হওয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস। চিঠির সঙ্গে আরবিতে লেখা রায়ের অনুলিপি এবং এ-সংক্রান্ত পেপার কাটিংসহ যাবতীয় নথি ৪ ফেব্রুয়ারি কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত এই সাংসদের বিষয়ে সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে রায়ের কপিসহ সব নথি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হবে। এরপর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।

মানব ও মুদ্রা পাচারের মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মো. শহিদ ইসলামকে গত ২৮ জানুয়ারি সাজা দেন কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। বিচারক রায়ে এই সাংসদকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাংসদ বিদেশের মাটিতে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় শহিদকে। আটকের সাড়ে সাত মাস আর বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন তিনি।

কুয়েতে বাংলাদেশের দূতাবাসের পাঠানো চিঠির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো সাংসদ দণ্ডিত হলে নিয়মানুযায়ী স্পিকারকে অবহিত করতে হয়। সে অনুযায়ী সব নথিপত্র স্পিকারকে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৭২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে কিংবা কোনো আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হলে গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে স্পিকারকে জানাবে।

কুয়েতে মানব পাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল টাকার মালিক হন শহিদ ইসলাম। টাকার জোরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ বানান তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় লক্ষ্মীপুরে অনেকটা প্রকাশ্য আলোচনা ছিল যে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন শহিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। এই দম্পতির সাংসদ হওয়ার প্রক্রিয়ায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে প্রচার আছে।

কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের পৃথক দুই মামলায় সাংসদ শহিদসহ ৬ জনের ৬৭০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মামলা করে সিআইডি। আসামিদের মধ্যে তাঁর মেয়ে, ভাই ও শ্যালিকাও রয়েছেন। এর আগে ১১ নভেম্বর মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে শহিদ ও তাঁর স্ত্রী সেলিনার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাংসদ শহিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ শহিদ ইসলামের দণ্ডের রায় না দেখে কিছু করতে পারতাম না। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বা কারও কাছ থেকে শুনে তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাই আমরা রায়টা চেয়েছিলাম। সাংসদের দণ্ডের রায় তো দেওয়া হয়েছে বিদেশের আদালত থেকে। এ ছাড়া দেশের কিছু রায় ও আপিল আছে, এসব দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

শহিদ ইসলাম সংসদ সদস্য পদ হারাবেন কি না, জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিসহ যেসব আইনকানুন রয়েছে, তা দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংবিধানের ৬৬ ধারাতে বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজা হলে সে ক্ষেত্রে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারান। কুয়েতের আদালতের রায় দেখে বিষয়টি তাঁর (শহিদ) ব্যাপারে প্রযোজ্য কি না, সেটি দেখা হবে।

সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে কি না, সে সম্পর্কে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয় এবং এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।