শহিদের স্ত্রী-মেয়ের জামিন আবেদনে উপস্থাপিত চিঠি তদন্তের নির্দেশ

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

কুয়েতে দণ্ডিত বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামের (পাপুল) স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলাম ও তাঁদের মেয়ে ওয়াফা ইসলামের হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে করা আবেদনের সঙ্গে দেখানো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

জামিন আবেদনের শুনানিতে ‘মানি লন্ডারিং সংগঠিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালকের এক চিঠির কথা উল্লেখ করেন তাঁদের আইনজীবী। ওই চিঠি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি বলে উচ্চ আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তদন্তের এ নির্দেশ দেন।

এর আগে আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই দুজনকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। শুনানিতে ওই চিঠির বিষয়টি নজরে এলে সেদিন আদালত স্বপ্রণোদিত রুল দেন। কোন কর্তৃত্ববলে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক আরেফিন আহসান মিঞাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, ওই উপপরিচালকের পক্ষে আইনজীবী তানভীর পারভেজ শুনানি করেন। জামিন আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোতাহার হোসেন।

নথিপত্র পর্যালোচনা করে ঘোষিত রায়ে আদালত বলেন, আগাম জামিন আবেদনে যে চিঠি (মানি লন্ডারিং সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি বিষয়ে) উপস্থাপন করা হয়েছে, তা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়ে কোনো জালিয়াতি ও প্রতারণা হয়েছে কি না, দুদক তা অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে। রায় পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হলো। অনুসন্ধান ও তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে শহিদের স্ত্রী, মেয়ে, তদবিরকারীসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে।

শুনানিতে সাংসদ শহিদের স্ত্রী ও মেয়ের আইনজীবী জানান, চিঠিটি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। উপপরিচালকের আইনজীবী বলেন, এ ক্ষেত্রে ঘষামাজা হয়েছে। এনআরবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানান, এ ধরনের কোনো কাগজপত্র তাঁরা দেননি। আদালত এ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি তলব করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, জামিন আবেদনে দেখানো কথিত চিঠির কোনো অস্তিত্ব নেই। ব্যাংকের মূল নথির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এতে কে বা কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। জামিন আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেন, নথি জালিয়াতি হয়ে থাকলে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, শহিদ ইসলাম লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ। শহিদ বর্তমানে কুয়েতে কারাবন্দী অবস্থায় আছেন। ঘুষ লেনদেনের দায়ে কুয়েতের একটি আদালত তাঁকে সম্প্রতি চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন দেশটির আদালত। আর সেলিনা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ। এই দম্পতিসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় শহিদের স্ত্রী ও তাঁদের মেয়ে হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন।