শাবিপ্রবি উপাচার্য না সরা পর্যন্ত জাফর ইকবালকে আন্দোলনে দেখতে চান সেলিম

শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগে গণ–অবস্থানে বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
ছবি: প্রথম আলো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়েছেন লেখক ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। জাফর ইকবালের উদ্দেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘আপনি ঘরে চলে যাবেন না। যত দিন উপাচার্যের পদত্যাগ অর্জন না হবে, তত দিন আপনাকে এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা দেখতে চাই।’

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাফর ইকবালের উদ্দেশে এসব কথা বলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ‘শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা’ ব্যানারে বামপন্থী আটটি ছাত্রসংগঠনের ডাকা এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। তবে বৃষ্টির কারণে অনেকেই বক্তব্য দিতে পারেননি।

গণ–অবস্থানে সিপিবির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে পর্যুদস্ত করে দেশের ভেতরে আজকে একটি সিন্ডিকেটের শাসন কায়েম হয়েছে। এর একদিকে লুটেরা শাসকগোষ্ঠী, অন্যদিকে সামরিক-বেসামরিক দুর্নীতিবাজ আমলা। এ ছাড়া আছে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ। বিদেশ থেকে কলকাঠি নেড়ে তারা একটা পাপচক্রের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে। তারই প্রকাশ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো।’

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ বলেন, সরকারের সহযোগিতায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছেন। সব দিক থেকেই সেখানে একটা চরম অন্যায় সংঘটিত হয়েছে। অনশন প্রত্যাহারের কারণে এ আন্দোলন বন্ধ হবে না। কেউ যদি মনে করেন, আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে, তা সঠিক নয়। নতুন নতুন শক্তি এ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগসহ চলমান কায়েমি সিন্ডিকেটের ফ্যাসিবাদী শাসনকেও উৎখাত করবে।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের উদ্দেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘জাফর ইকবাল ক্যাম্পাসে গিয়ে অনশনকারীদের অনশন ভাঙার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁকে বলব, আপনি ঘরে চলে যাবেন না। যত দিন উপাচার্যের পদত্যাগ অর্জন না হবে, তত দিন আপনাকে এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা দেখতে চাই।’

গণ–অবস্থানে অংশ নিয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির সংস্কৃতি থেকে আমরা সরে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন যে যত বড় চামচা, সে তত বড় হয়। তেল দেওয়ার চেয়ে বড় কোনো কাজ তাঁদের আছে বলে এই চামচারা মনে করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত ছাত্রছাত্রীদের জন্যই। তাঁরা না থাকলে শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারী কারোরই প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার জন্যই বাকিরা আছেন। একইভাবে নাগরিকদের সেবার জন্য সরকার বানানো হয়। কিন্তু তারা উভয়েই ভাবেন উল্টোটা।’

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকে ‘সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান অরাজকতার বিরুদ্ধে জ্বলন্ত আন্দোলন’ বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন৷ তিনি বলেন, উপাচার্যদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দোকানপাটের মতো। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হলেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাঁদের ওপর গুলি করালেন, নানাভাবে নিপীড়ন করলেন। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলাও করালেন। ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানো যাবে না। শুধু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, একই অবস্থা সব বিশ্ববিদ্যালয়েই জারি আছে।

ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অনিক রায়ের সঞ্চালনায় এ মানববন্ধনে সাবেক–বর্তমান ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ বক্তব্য দেন। এ ছাড়াও ছিল চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, প্রাচ্যনাট ও সমগীতের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানসহ কয়েক শিক্ষক এ কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এলেও বৃষ্টির কারণে তাঁরা বক্তব্য দিতে পারেননি।

এদিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আজ বিকেলে শাহবাগে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে একটি নাগরিক সংহতি সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এ কর্মসূচি করা যায়নি।