শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি

টিএসসি এলাকা থেকে কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত মশাল মিছিল করেছে বাম সংগঠনগুলো
ছবি: আসিফ হাওলাদার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে হওয়া আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার সাত শিক্ষার্থী ও খুলনা থেকে গ্রেপ্তার শ্রমিকনেতা রুহুল আমিনের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। এ ছাড়া চার দফা দাবিতে কাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো। একই সময়ে এসব দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ করবে তারা।

চার দফা দাবিতে আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত মশাল মিছিল করেছে বাম সংগঠনগুলো। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো লেখক মুশতাকের কারাগারে ‘নির্মম হত্যাকাণ্ডের’ বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি ও আইনটি বাতিল।

লেখক মুশতাক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার রাতে কাশিমপুর কারাগারে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ ওই ঘটনায় সেই রাতেই পুলিশকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাম সংগঠনের সাত নেতা-কর্মীকে আসামি করে একটি মামলা হয়। আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই মামলার শুনানি হয়েছে। বিকেলে জামিন নামঞ্জুর করে সাতজনকে কারাগারে পাঠান আদালত।

গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের মুক্তি এবং আগের দাবিগুলো আদায়ে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় টিএসসির সঞ্জীব চত্বর থেকে মশাল মিছিল বের করেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ ও কাঁটাবন মোড় ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে ফিরে আসে। শাহবাগ থানার সামনে দিয়ে আসার সময় মিছিল থেকে থানার ফটক লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।

আন্দোলনকারীদের একজন ফটকের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়েও যান। পরে কয়েকটি বাম সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতা আন্দোলনকারীদের শান্ত করে মিছিলের সঙ্গে নিয়ে যান।
সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে মিছিলটি টিএসসিতে পৌঁছালে সেখানে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্র ও কারাগারে পরিণত হয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই কারাগারে বন্দী। এই পুলিশি রাষ্ট্র ও কারাগার ভাঙা ছাড়া মুক্তি আসবে না। গত শুক্রবার শাহবাগের মশাল মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আমাদের সাত সহযোদ্ধার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার শুনানি ছিল আজ (গতকাল)। তাঁদের জামিন দেওয়া হয়নি। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি, মিথ্যা মামলা রুজু করেছে।’

আল কাদেরী বলেন, ‘অবিলম্বে আমাদের কমরেডদের মুক্ত করা না হলে দেশের সব কারাগার ও আদালতে আমরা জায়গা করে নেব, বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব। এরপরও দাবি না মানা হলে আমাদের দাবি হবে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও পতন। দাবি আদায়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রাজু ভাস্কর্যে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করব। এ ছাড়া সারা দেশে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়ের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিফ অনীক প্রমুখ বক্তব্য দেন। পৌনে আটটায় সমাবেশটি শেষ হয়।

এর আগে জামিন নামঞ্জুরের প্রতিবাদে আজ বেলা পাঁচটার দিকে টিএসসি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা রাগীব নাঈম ও ঢাকা মহানগর শাখার নেতা তাসিন মল্লিকের নেতৃত্বে এই মিছিলে ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫-৩০ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন। মিছিলে দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।