শিক্ষকতা চাকরি নয়, মহান পেশা

শিক্ষকতা কোনো চাকরি নয়, এটি একটি মহান পেশা। এই পেশার মানুষের মধ্যে কে প্রিয়, আর কে প্রিয় নন, তা বাছাই করা কঠিন। এমন একদিন আসুক, যেদিন প্রিয় শিক্ষক বাছাই করতে হবে না, দেশের প্রতিটি শিক্ষক হয়ে উঠবেন সবার কাছে প্রিয় মানুষ। সেদিন আইপিডিসি-প্রথম আলোর সম্মাননা অনুষ্ঠান আরও সার্থক হবে।
‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনলাইন সুধী সংযোগ রাজশাহী পর্বের অনুষ্ঠানে বক্তারা এই প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সুধী সংযোগ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, ব্যাংকারসহ নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।
প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও ইভেন্টস বিভাগের প্রধান মুনির হাসান। অনলাইনে যুক্ত হয়ে সুধী সংযোগে বক্তব্য দেন আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শারমিন এফ অ্যানি।

অনুষ্ঠানে সংযুক্ত নাট্যকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মলয় ভৌমিক বলেন, শিক্ষক মানেই তো সবার প্রিয় হওয়ার কথা ছিল। তাঁদের খুঁজে বের করার কথা ছিল না। পরিতাপের বিষয়, আজ প্রিয় শিক্ষকদের খুঁজতে হচ্ছে। শিক্ষকেরা প্রিয় শিক্ষক হওয়ার জন্য শিক্ষকতা করেন না। তাঁরা নৈতিকভাবে তাঁদের মহান দায়িত্বটা পালনের চেষ্টা করেন। এই অনুষ্ঠান দেখে যেন কোনো শিক্ষক প্রিয় শিক্ষক হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু না করেন। একজন শিক্ষকের তাতে নৈতিক স্খলন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. হবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা হয়তো আজ সমাজে মর্যাদা পাই না। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা আজও কিন্তু মর্যাদা দিয়ে যাচ্ছে। তবে আগের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের প্রতি খুব দায়িত্বশীল ছিলেন। তাঁরা একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিতে শিখিয়েছেন।’


রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ইকবাল মতিন বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে যাঁরা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁরাই আমার প্রিয় শিক্ষক। তাঁরা কাদামাটির মতো করে প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। আর আমরা শিক্ষকেরা প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৈরি হয়ে আসা শিক্ষার্থীদের পড়াই।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী জানান, তাঁর একজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন, তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে থাকাকালে স্কুল শেষে তাঁদের বিনা পয়সায় পড়াতেন। তিনি তাঁদের বলেছিলেন, ‘তোমরা রাতে পড়ো কি না, দেখতে যাব।’ তিনি বলতেন ‘তুই পারবি।’ সেই শিক্ষকই তাঁর প্রিয় শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তানভিরুল হক ও সায়েদুর রহমান, জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার, ব্যাংক কর্মকর্তা সোয়াইবুর রহমান, সংস্কৃতিকর্মী মনিরা রহমান, রাজশাহী কলেজের শিক্ষক নিতাই কুমার সাহা, উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল, বাংলাদেশ বেতারের ভাষ্যকার ও শিক্ষক আবদুর রোকন, লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন প্রমুখ।
এ ছাড়া প্রিয় শিক্ষক সম্মাননার মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। অনলাইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করা যাবে www.priyoshikkhok.com ওয়েব ঠিকানায়। অনুষ্ঠানের আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন প্রথম আলো রাজশাহীর বন্ধুসভার সদস্যরা।