শিক্ষা নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ‘প্রয়োজন নেই’

বুধবার ‘বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে শিক্ষা খাতের অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনার পরামর্শ সভায় শিক্ষা নিয়ে অভিমত তুলে ধরেন বিশিষ্টজনেরা

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে শিক্ষায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভর্তির হার ও সাক্ষরতার হার বেড়েছে, কমেছে ঝরে পড়ার হার। এমন উন্নতি আরও অনেক আছে। এখন গুণগত শিক্ষায় বেশি জোর দিতে হবে। বিশেষ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে যুগোপযোগী ও কারিগরি শিক্ষার ওপর নজর বাড়াতে হবে। আর শিক্ষা নিয়ে এত ঘন ঘন পরীক্ষা-নিরীক্ষার চিন্তা বাদ দিতে হবে।

আজ বুধবার ‘বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে শিক্ষা খাতের অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনার পরামর্শ সভায় শিক্ষা খাতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা এসব কথা বলেন। সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও), গণসাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহসানিয়া মিশন ও এডুকেশন ওয়াচ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শিক্ষা খাতে বিভিন্ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কী ধরনের কর্মক্ষেত্র আছে বা কোন জায়গায় শিক্ষা কাজে লাগবে, তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যদি শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ানো সম্ভব হবে। এ জন্য এখন কারিগরি শিক্ষার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

দীর্ঘদিনেও শিক্ষা আইন না হওয়া, শিক্ষা খাতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ঘন ঘন পরিবর্তনের সমালোচনা করেন এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, একবার বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়া হবে, পরেই আবার বলা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হবে। শিক্ষা নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। উন্নত বিশ্বেও পরিবর্তন হয়। কিন্তু কিছুদিন পরপর এ রকম বিরাট পরিবর্তন হয় না। ফিনল্যান্ডে তো ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত পরীক্ষাই হয় না। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জমান আরও বলেন, আশপাশের সব দেশে আইনে আছে শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীর অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সেই আইনটি হয়নি।

প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রারম্ভিক শিক্ষাকে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাঈখ সিরাজ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

করোনাকালে প্রাক্-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কথা ভুলেই যাওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, করোনার সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে মহামারি চলছে, সেটি সবাই জানে। কিন্তু শিক্ষায় মহামারি নীরবে হচ্ছে। সবাইকে একত্র হয়ে শিক্ষার এই মহামারি মোকাবিলা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা খাতের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশের বেশি, যা স্বাধীনতার পর ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। সাক্ষরতার হারে এগিয়ে গেলেও এখনো ২৫ লাখ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে গেছে। ঝরে পড়ার হারও কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে প্রাথমিকে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত, এখন সেই হার ১৮ শতাংশ। তবে করোনাকালের প্রভাবে এই হার কেমন হয়, সেটি এখনো নিরূপণ হয়নি।

সরকারের করা জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (এনএসএ) তথ্য উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলা ও গণিতে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনের পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। ২০১৩ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে বাংলায় দক্ষতা অর্জনের হার ছিল ৭৫ শতাংশ, সেখানে ২০১৫ সালে তা কমে হয় ৬৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে গণিতে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনের হার ছিল ৩৪ শতাংশ, তা ২০১৫ সালে এসে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাংসদ আরমা দত্ত, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক এম এহছানুর রহমান প্রমুখ।