শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি রুটের দুই ফেরি সরে যাচ্ছে

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর প্রথম দিন গতকাল রোববার অলস পড়ে ছিল ফেরিগুলো। শিমুলিয়া ঘাট, মুন্সিগঞ্জ, ২৬ জুন
ছবি: প্রথম আলো

এক দিনের ব্যবধানে কত পরিবর্তন! পদ্মা সেতু চালুর আগের দিন পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট ছিল সরগরম। প্রমত্ত পদ্মা নদী ফেরি দিয়ে পার হতে মানুষ ছুটত এ ঘাটের দিকে। সেই চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে।

শনিবার উদ্বোধনের পর গতকাল রোববার সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়। এদিন শিমুলিয়া ঘাট ছিল প্রায় ফাঁকা। গতকাল শিমুলিয়া ঘাটে কোনো গাড়ি যায়নি। ফেরিগুলো ঘাটে অলস থেমে ছিল। ঘাটে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের দিন কাটে অলসভাবে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, শিমুলিয়া ঘাটে আটটি ফেরি দাঁড়িয়ে আছে। এদিন এখান থেকে কোনো ফেরি শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাটে যায়নি। আবার মাঝিরকান্দি থেকে কোনো ফেরি শিমুলিয়ায় আসেনি।

ফেরিগুলোতে যাঁরা বিভিন্ন পদে কর্মরত, তাঁরা অলস সময় পার করছিলেন। কেউ বাইরে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। কেউ ফেরিতে বসেছিলেন।

একটি ফেরিতে কর্মরত মোহাম্মদ ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর তাঁদের ঘাটে কোনো গাড়ি আসেনি, ফেরি আসেনি। ঘাট থেকে ফেরি ছাড়েনি। তাই তাঁদের ব্যস্ততা নেই।

এত দিন উত্তাল পদ্মা পার হতে ফেরিই ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রধান বাহন। কিন্তু গতকাল সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর মানুষ এ সেতু দিয়েই যাতায়াত করেন। ফলে শিমুলিয়া ও মাঝিরকান্দি ঘাট গতকাল যানবাহনশূন্য হয়ে পড়ে। তবে উৎসুক অনেক মানুষকে উভয় ফেরিঘাট এলাকায় ঘোরাঘুরি ও ছবি তুলতে দেখা যায়।

পদ্মা সেতু চালুর পরিপ্রেক্ষিতে শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি রুটের আটটি ফেরির মধ্যে দুটিকে আজ সোমবার অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফেরি দুটি হলো—সুফিয়া কামাল ও বেগম রোকেয়া।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাট প্রায় ফাঁকা। এখন আমরা প্রাথমিকভাবে এ রুট থেকে দুটি ফেরি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি। ধীরে ধীরে বাকি ছয়টি ফেরিও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।’

দুটি ফেরি আজ সোমবারই নতুন রুটে চলে যাবে বলে জানান এস এম আশিকুজ্জামান। তিনি বলেন, সুফিয়া কামাল ফেরিটি যাবে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাট রুটে। আর বেগম রোকেয়া ফেরিটি যাবে চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে।

আরিচা-কাজীরহাট ও চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে এত দিন প্রয়োজনের তুলনায় ফেরির সংখ্যা কম ছিল বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়। তাই এ দুই রুটে ফেরির সংখ্যা বাড়াতে দাবি জানিয়ে আসছিলেন যাত্রীরা। এখন দুই রুটে দুটি ফেরি যুক্ত হচ্ছে।

শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি রুটের বাকি ছয়টি ফেরি হলো কুঞ্জলতা, ক্যামেলিয়া, কুমিল্লা, ফরিদপুর, কর্ণফুলী ও রায়পুরা।

যান চলাচল শুরুর প্রথম দিন গতকাল সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুতে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হন। পরে রাতে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, আজ ভোর ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন কেউ ফেরি দিয়ে মোটরসাইকেল নিতে চাইলে তারা সেবা দিতে প্রস্তুত আছে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিসির ছোট ফেরি আছে।

বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু অনির্দিষ্টকালের জন্য পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই এখন বাইকচালকেরা ঘাটে এলে আমরা তাঁদের নদী পার করার ব্যবস্থা করব। আমাদের সে প্রস্তুতি আছে।’

শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাটে চলাচলকারী ফেরি সুফিয়া কামাল অন্য রুটে চলে যাচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

১৯ নতুন ফেরি রুট চিহ্নিত

ভবিষ্যতে চালুর জন্য ১৯টি নতুন ফেরি রুট চিহ্নিত করেছে বিআইডব্লিউটিসি। প্রস্তাবিত রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট। মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার নরাদহ। পিরোজপুরের বেকুটিয়া থেকে চরখালী। কক্সবাজার থেকে মহেশখালী। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে হিজলা। বরগুনা থেকে আমতলী। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে জামালপুর।

যমুনা নদীর রৌমারী থেকে চিলমারী নৌ রুট ও নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে ভোলার মনপুরা হয়ে তজুমদ্দীন পর্যন্ত ফেরি দেওয়া নিয়ে আলোচনা আছে। শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরি এসব রুটে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

ফেরিঘাটে উৎসুক মানুষ। শিমুলিয়া ঘাট, মুন্সিগঞ্জ, ২৬ জুন
ছবি: প্রথম আলো

রেস্তোরাঁ জমজমাট

শিমুলিয়া ঘাট গতকাল ফাঁকা থাকলেও জমজমাট ছিল এলাকার রেস্তোরাঁগুলো।

অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে শিমুলিয়া ঘাট এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে বেচাবিক্রি কমে যাবে। কিন্তু রেস্তোরাঁমালিকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের ভাষ্য, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ পদ্মা সেতু দেখার পর তাঁদের রেস্তোরাঁয় খেতে আসছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

নিরালা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক মানুষ পদ্মা সেতু দেখতে আসছেন। সেতু দেখার পর অনেকে রেস্তোরাঁয় ইলিশ খাওয়ার জন্য আসছেন।’

শিমুলিয়া ঘাটের হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মুরাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ঘাট এলাকায় ৪৫টি রেস্তোরাঁ আছে। সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সব কটি রেস্তোরাঁয় বিক্রি বেড়েছে। সেতু দেখতে আসা লোকজনের কারণে ভবিষ্যতে রেস্তোরাঁয় বিক্রি আরও বাড়বে বলে তাঁরা আশা করছেন।