শীত ও বাতাসের দূষণ বাড়ছে একসঙ্গে

ধুলায় আচ্ছন্ন চারদিক। সম্প্রতি রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীত বেড়েছে। কিন্তু শীতের সঙ্গে আসা বাতাসে দূষণও একই সঙ্গে মারাত্মকভাবে বেড়েছে। গতকাল শনিবারও ভোর ছয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বায়ুমান ছিল সবচেয়ে দূষিত, একই সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নির্মাণকাজ বেড়ে গেছে, ধুলা বেড়েছে। যানবাহন চলাচল বেড়েছে, ধোঁয়া বের হচ্ছে বেশি। একই সঙ্গে উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয় বাংলাদেশের ওপরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে আরব সাগর হয়ে মরুভূমি পেরিয়ে আসা ধুলা আর জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সব মিলে একদিকে শীত বাড়ছে, আরেক দিকে বায়ুমানও খারাপ হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, তিন দিন ধরে চলমান শৈত্যপ্রবাহ এ মাসের বাকি সময়জুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে। মাঝে ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বাতাসে জলীয় বাষ্প ও আকাশে মেঘ বেড়ে যেতে পারে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুয়াশা ও হালকা বৃষ্টি হতে পারে, তাপমাত্রাও কিছুটা বাড়তে পারে। এরপর তাপমাত্রা আবারও কমতে থাকবে।

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ এ মাসের বাকি সময়জুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ মাসের শেষ সপ্তাহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু বড় শহরগুলোতে শহরের ধুলার সঙ্গে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বাতাসে জলীয় বাষ্পমিশ্রিত ধুলা মিশে তাপমাত্রাকে কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালের মতো বড় শহরগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার সম্ভাবনা নেই।

ঢাকার বায়ুমান শীতের এই সময়ে বেশ খারাপ হয়। ফলে এই সময়ে রাস্তায় পানি ছিটানো, যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ অন্য কার্যক্রমগুলো নিলে অবস্থা এতটা খারাপ হতো না।
আবদুস সালাম, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া বগুড়া, নওগাঁর বদলগাছী, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর ও পাবনায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আজ রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে। আর দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বিশ্বের বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা শহরের বায়ুমান দিনের বেশির ভাগ সময় বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত ছিল। গতকাল ভোর ছয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমানের সূচক ছিল ৩০০ থেকে ৩৮০-এর মধ্যে, যেখানে সহনীয় মাত্রা ১০০-এর নিচে। বাতাসে দূষিত অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ছিল সাধারণ মানমাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৮ গুণ বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুমান গবেষক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বায়ুমান শীতের এই সময়ে বেশ খারাপ হয়। ফলে এই সময়ে রাস্তায় পানি ছিটানো, যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ অন্য কার্যক্রমগুলো নিলে অবস্থা এতটা খারাপ হতো না।