শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: দণ্ডিত ৭ জনের জামিন স্থগিতই থাকছে

সাতক্ষীরায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সাত আসামিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতই থাকছে। দণ্ডিত সাতজনের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

এর ফলে দণ্ডিত সাত আসামিকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইতিপূর্বে দেওয়া স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে, বলেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে সাতক্ষীরার দায়রা আদালতে দণ্ডিতের করা আপিল আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডিত সাতজন হলেন আবদুস সাত্তার, গোলাম রসুল, আবদুস সামাদ, জহিরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মনিরুল ইসলাম। ওই মামলায় গত ২৫ মে হাইকোর্ট দণ্ডিত সাতজনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা ২৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি ৩০ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। সেদিন আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করতে রাষ্ট্রপক্ষকে তিন সপ্তাহ সময় দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ২০ জুন দিন রাখে। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি শেষে আদেশ দেওয়া হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন।

২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে সেখানে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সড়কপথে ঢাকায় ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হন শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিক। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে বিএনপির তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলামসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

এর মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলায় ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দেন। রায়ে বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ তিনজনকে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মোট ১০ বছর করে এবং অপর ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা দায়রা আদালতে পৃথক আপিল করে জামিন চান সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। এই আদালতে তাঁদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর হলে এর বিরুদ্ধে গত এপ্রিলে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে পৃথক আবেদন করেন তাঁরা। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তাঁদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।