শ্যামনগরে দুই দিনেও বাঁধা যায়নি আম্পানে ধসে পড়া বাঁধ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতের পর দুই দিন গড়িয়েছে। কিন্তু ছোট ছোট দুটি স্থান ছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ভেঙে যাওয়া অধিকাংশ স্থানের বাঁধ মেরামত করা যায়নি। ফলে নদীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে রীতিমতো জোয়ার-ভাটার মধ্যে বসবাস করছে উপকূলীয় দুর্গত জনপদের হাজারো পরিবার।
বাসস্থানের সংকটের কারণে আশ্রয়কেন্দ্র আর রাস্তাসহ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে নানা বয়সী মানুষ। সরকারি ত্রাণ সহায়তা ছাড়া অদ্যাবধি কোনো সাহায্য–সহযোগিতা না পেয়ে রোজার এ সময়ে চরম দুঃসময় পার করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এ অবস্থার মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূলীয় জনপদ শ্যামনগরের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছেন। সুপার সাইক্লোন থেকে বাতাসের গতি কমে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পরও ক্ষয়ক্ষতি কিছু কম করেনি আম্পান।
স্থানীয় লোকজন জানান, আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকেও কলবাড়ী থেকে নীলডুমুর পর্যন্ত বিস্তৃত কার্পেটিংকৃত পাকা সংযোগ সড়কের ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি বইছে। আম্পানের পর যেসব পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়, তারাও শুক্রবারের জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে আবারও ফিরেছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হওয়া শাহিন মোল্যা জানান, ঝড় যত না ক্ষতি করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করেছে বানের পানি। তাঁকে অনুসরণকারী আমজাদ মোল্যা বলেন, ‘ঝড় সাময়িক সময়ের জন্য মানুষকে আতঙ্কিত করলেও জোয়ারের পানি গোটা এলাকার ধনী-গরিব সবাইকে বাড়িঘর ছাড়া করে দিছে।’

দাতিনাখালী গ্রামের বাঘ বিধবা জহুরা বেগম ও মরিয়ম খাতুন জানান, আম্পানের পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাড়িতে ফিরলেও আজ জোয়ারের সময় শোয়ার ঘরের খাটের ওপর দাঁড়িয়ে রক্ষা পেয়েছেন। পরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলে অন্যরা এসে তাঁদের ঘর থেকে বের করে আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন। জোয়ার-ভাটার মধ্যে বসবাসরত এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, বসতঘর পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকার কারণে তাঁরা রান্না করতে পারছেন না। রান্নার কোনো উপকরণ অবশিষ্ট নেই। বানের পানিতে মৎস্য খামার আর কাঁকড়া খামার ডুবে যাওয়ায় আয়রোজগারের পথ বন্ধ। বাধ্য হয়ে সরকারের দেওয়া খিচুড়ি আর শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটালেও খাবার পানির অভাবে নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

একইভাবে ভাঙনকবলিত দুর্গাবাটি এলাকায় পৌঁছে দেখা যায়, পাশের খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোটা এলাকায় জোয়ার-ভাটা বইছে। এলাকাটিতে মানুষের বসবাস কম হলেও সমগ্র এলাকার শতাধিক চিংড়িঘের রীতিমতো একাকার হয়ে রয়েছে নদীর সঙ্গে। এ ছাড়া সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ায় অনেকে গবাদিপশুর সঙ্গে উঁচু স্থানে অবস্থান নিয়েছে। জেলা পরিষদ সদস্য ডালিম কুমার ঘরামী শতাধিক শ্রমিক নিয়ে কাজ করেও দুর্গাবাটির ভাঙনকবলিত অংশ বাঁধতে পারেনি। তিনি আরও জানান, এভাবে টানা জোয়ার-ভাটা চলতে থাকলে ক্রমেই ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি গোটা এলাকা মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বুধবার রাতে আম্পানের আঘাতে প্রথম ভেঙে যাওয়া সুন্দরবনের মধ্যকার একমাত্র লোকালয় গোলাখালীর নিরাশ্রয় পরিবারগুলোর মধ্যে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ত্রাণসহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূলীয় শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, দাতিনাখালী এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় সর্বস্ব হারিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়া শতাধিক পরিবারে মধ্যে তিনি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
এদিকে উপকূলবর্তী এলাকার ভেঙে যাওয়া অংশের বাঁধ মেরামতকাজ তদারকির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী একটি দল শ্যামনগরে পৌঁছেছে।