শ্রম আইন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় আইএলও

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধন করলেও তা আন্তর্জাতিক শ্রমমানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ নয়। যদিও এসব শর্ত পূরণের জন্য আইএলও সুপারিশ করেছিল। জেনেভা থেকে গতকাল সোমবার প্রচারিত আইএলওর এক বিবৃতিতে এমন অভিমত দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আইএলও এই বিবৃতিতে সংশোধিত আইনে শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে সংস্থার কিছু উদ্বেগ দূর করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে। বিবৃতিতে আইএলও বলেছে, বাংলাদেশ সরকার আইএলওর যেসব সনদ অনুসমর্থন করেছে, সে অনুযায়ী এবং সরকারের অঙ্গীকার প্রতিপালনের লক্ষ্যে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে শ্রম আইনে বাড়তি কিছু সংশোধনী আনতে হবে। উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই জাতীয় সংসদে সংশোধিত শ্রম আইন পাস করার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইএলওর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে এসব সংশোধনী আনা হয়েছে। এমনকি গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমসচিব মিকাইল শিপার সাংবাদিকদের বলেন, আইএলওর সঙ্গে নিয়মিত সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশকে নিয়ে আইএলওর বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম (উন্নততর কর্মসংস্থান কর্মসূচি) শিগগিরই চালু হচ্ছে। জানতে চাইলে শ্রমসচিব গতকাল রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘শ্রম আইন সংশোধনের সময় আইএলওর ঢাকা দপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা তাদের অবহিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা এখন বিবৃতিতে কেন এসব বলছে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আইএলওর এ অবস্থান দুঃখজনক বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বাংলাদেশের জিএসপি আলোচনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শ্রম আইনে আইএলওর যে চারটি বিষয়ে উদ্বেগ ছিল, তা দূর করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্যোগে ৮ জুলাই আইএলওসহ বাংলাদেশের সম্মত ঘোষণাতে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইপিজেডের ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে আইএলওর নতুন অবস্থান প্রশ্নের জন্ম দেয়। যেখানে উদ্বেগ রয়ে গেছে: আইএলও সংশোধিত শ্রম আইনে যেসব জায়গায় তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে শ্রমিক অধিকার। এ ক্ষেত্রে আইএলও বলছে, একটি কারখানার ট্রেড ইউনিয়ন চালুর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শ্রমিককে যোগ দেওয়ার যে ধারাটি রয়েছে, তা বিলোপ করা হয়নি।
সংশোধিত আইনে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়ন চালু ও যৌথ দর-কষাকষির বিধান যুক্ত করা হয়নি। আইএলওর মতে, সংশোধিত আইনে বরং এমন কিছু ধারা যুক্ত হয়েছে, যাতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, সংশোধিত আইনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক এবং কিছু খাতকে বাদ দেওয়া উদ্বেগজনক। আগামী দিনে যা করতে হবে: সরকারের পক্ষ থেকে খুব শিগগির বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও ভিন্ন কথা বলছে আইএলও। আইএলওর যেসব সনদ অনুসমর্থন করা হয়েছে, সে অনুযায়ী অঙ্গীকার পূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জেনেভাভিত্তিক সংস্থাটি। এ ছাড়া গত জুনে সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া অঙ্গীকার এবং ৮ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্মত ‘কমপ্যাক্টের’ প্রতিশ্রুতি পূরণে বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানা পরিদর্শকের দপ্তরকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সংশোধিত আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন এবং নতুন দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে কারখানা পরিদর্শকের সামর্থ্য বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে আইএলও। সংস্থাটি বলছে, ‘আইএলও ও বিশ্বব্যাংকের সংস্থা আইএফসি বাংলাদেশে বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম চালুর সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে। এ কর্মসূচি হচ্ছে মালিক, ট্রেড ইউনিয়ন ও সরকারের একটি যৌথ প্রয়াস, যা তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মপরিবেশের উন্নতি ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে। একটি সমীক্ষা চালানোর পর এ কর্মসূচি শুরুর জন্য ন্যূনতম কী কী শর্ত পূরণ করা জরুরি, তা বাংলাদেশকে জানানো হবে। শ্রম আইন সংশোধনসহ বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বেটার ওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ আগামী সপ্তাহে পর্যালোচনা করে দেখবে। আইএলও কর্মকর্তার ঢাকা সফর: আইএলওর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ইয়োশিতেরু উরামোতো ৩০ জুলাই ঢাকায় আসছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশের কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা তাঁর বাংলাদেশ সফরের প্রধান প্রতিপাদ্য। তিন দিনের এ সফরের সময় তিনি পররাষ্ট্রসচিব, শ্রমসচিবসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।