সংকটে বিএনপি অন্যকে বলে ‘পেহেলি আপ’

পীর ফজলুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক খাত বখে যাওয়া অবাধ্য সন্তানের মতো। এই খাতকে কোনোভাবেই সরল পথে আনা যাচ্ছে না। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে পীর ফজলুর রহমান এ কথা বলেন।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনার পাশাপাশি বিএনপিরও সমালোচনা করেন বিরোধী দলের এই সাংসদ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা আসার পর বিএনপি এখন বলছে, আওয়ামী লীগকে আগে টিকা নিতে হবে। যেকোনো সংকটে বিএনপি অন্য দলকে এগিয়ে দিতে চায়। তখন তারা বলে, ‘পেহেলি আপ’। টিকা নিয়ে রাজনীতি ঠিক না।
জাতীয় পার্টির সাংসদ আরও বলেন, বিএনপিদলীয় একজন সদস্য গতকাল সোমবার বলেছেন, দেশে মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না, অনাহারে আছে। কোথা থেকে বিএনপি এই তথ্য পেয়েছে, তিনি জানেন না। এটা মিথ্যা কথা। দেশে কোনো খাদ্যসংকট নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী অনেক কিছু করছেন, এসব দৃশ্যমান। কিন্তু অর্থনীতির সেক্টর অবাধ্য বখে যাওয়া সন্তানের মতো। তিনি বলেন, দুর্নীতি হলে সবার আগে রাজনীতিবিদদের কলুষিত করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা বেশি অর্থ পাচার করছেন। এটি খতিয়ে দেখা দরকার, কোন কোন কর্মকর্তা অর্থ পাচার করছেন।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘যারা পিপলস লিজিংয়ে টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। অন্যদিকে পি কে হালদারের বান্ধবীরা সুখে আছেন। পি কে হালদারের অনিয়মের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, যাঁরা তাঁর আশপাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর উদ্ধৃত করে জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি আয়ের তথ্যে গরমিল রয়েছে। তাতে দেখা যায়, পাঁচ বছরে লাপাত্তা হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রের এই বিপুল অর্থ কোথায় আছে, আদৌ আছে কি না, তা জানেন না নীতিনির্ধারকেরা। বাংলাদেশ ব্যাংক আর ইপিবির রপ্তানি আয়ের এই গরমিলের টাকায় ছয়টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, লুটেরা কারা? এরা কি দলে, সরকারে, না আশপাশে? এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তিনি জানতে চান।

ফখরুল ইমাম বলেন, দেশে সম্পদশালীদের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে ধনীদের আয় যেভাবে বাড়ছে, দরিদ্রদের আয় সেভাবে বাড়ছে না। এর ফলে আয়–ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দরিদ্র। প্রায় দুই কোটি অতিদরিদ্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিরোধী দলের এই সাংসদ বলেন, শেখ হাসিনা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নন, বহুমাত্রিক।

সরকারি দলের সাংসদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলেন, সব সূচকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রওশন আরা মান্নান বলেন, পি কে হালদারকে বিদেশ থেকে ধরে এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। না হলে ভবিষ্যতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। অনেকে টাকাপয়সা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাবে। এ ধরনের আরও কত পি কে হালদার আছে, দুদককে তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, ‘হলমার্কের এমডি কারাগারে বান্ধবীর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। টাকা দিয়ে এগুলো ব্যবস্থা করেছে। এই টাকাগুলো নিজেদের হলেও নাহয় কথা ছিল। এসব টাকা ব্যাংকের, তারা বান্ধবীদের পেছনে খরচ করছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’

সরকারি দলের আরেক সাংসদ এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দিয়েছেন, তা উন্নয়নের দলিল। এই উন্নয়ন আপনা–আপনি হয়নি। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উন্নয়ন করেছেন।

সরকারি দলের সাংসদ আব্দুস সালাম মুর্শেদী শ্রমিকদের প্রণোদনার জন্য যে টাকা দেওয়া হয়েছে, তা পরিশোধে আরও ছয় মাস সময় দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনার অতীত ঐতিহ্য ফিরে আসবে। শিল্পনগরী হিসেবে ঘুরে দাঁড়াবে।

সরকারি দলের সাংসদ সাইফুজ্জামান বলেন, ভারত যে দামে করোনার টিকা পাচ্ছে, বাংলাদেশও একই দামে পাচ্ছে। অনেকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ সবার আগে টিকা নিয়েছেন, এই তথ্য সঠিক নয়।

যারা পিপলস লিজিংয়ে টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। অন্যদিকে পি কে হালদারের বান্ধবীরা সুখে আছেন। পি কে হালদারের অনিয়মের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, যাঁরা তাঁর আশপাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে
পীর ফজলুর রহমান

তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, জনগণ বিএনপিকে ভোট দিতে চায় না। এ কারণে বিএনপি এখন উন্মাদের মতো আচরণ করছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, সরকারি দলের সাংসদ দবিরুল ইসলাম, শাহীদুজ্জামান, সংরক্ষিত আসনের আদিবা আনজুম, মমতা হেনা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।