সংকটে সহকর্মীদের পাশে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান প্রথম আলোর সম্পাদনা সহকারী আবুল কালাম আজাদ

সব মিলিয়ে ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮০ জন এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬ জন। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন আরও ১৫ জন।

করোনায় আক্রান্ত কোনো কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রতিষ্ঠান পুরো চিকিৎসা ব্যয় বহন করে থাকে।

পৃথিবীর এক প্রান্তে হঠাৎ মানবজাতির জন্য এক নতুন শত্রুর আবির্ভাব। কখন, কোথায়, কীভাবে হানা দেবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা শুরুর আগেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল দেশে দেশে। বাংলাদেশেও যখন করোনার ঘা পড়ল, তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম আলোতে সীমিতভাবে হোম অফিস কার্যক্রম চালু করে দেওয়া হলো। সহকর্মীরা ভাগ হয়ে গেলেন দুটি গ্রুপে। কেউ আক্রান্ত হলে একদল হতে পারেন অন্য দলের বিকল্প।

আশঙ্কাটাই সত্যি হলো। প্রথম আক্রান্ত হলেন জ্যেষ্ঠ সহকর্মী শওকত হোসেন। দ্রুত জরুরি এক ভিডিও কনফারেন্সে সম্পাদক ঘোষণা দিলেন শতভাগ হোম অফিসের। সবাই মিলে এক দিনের মধ্যে কীভাবে যেন সেই ব্যবস্থাও পাকা হয়ে গেল। পরদিন সকালে পাঠক হাতে পেলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম হোম অফিসের মাধ্যমে প্রকাশিত পত্রিকা। এভাবেই গেল কয়েক মাস। শুরু হলো প্রথম আলোর করোনা মোকাবিলায় নতুন স্বাভাবিক যাত্রা।

অফিসজুড়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবলয়। অফিসের প্রবেশপথ থেকে স্পর্শযোগ্য সব স্থান জীবাণুমুক্ত রাখা। কর্মীদের মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, কর্মীদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক নিয়োগ, ইউনিভার্সেল হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা চুক্তি—সম্পাদক এসব বিষয়ে বারবারই খোঁজ নিচ্ছিলেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কর্মী ও তাঁদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি নজর রাখতে মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগকে নির্দেশনা দিলেন। করোনা লক্ষণ দেখা দিলেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনে ভর্তির ব্যবস্থা, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব সহায়তা, নিয়োগকৃত চিকিৎসকের মাধ্যমে আক্রান্ত কর্মীদের টেলিচিকিৎসাসেবা ও নিয়মিত ফলোআপ। আক্রান্তদের বাসায় ফলমূলসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পাঠানোর ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়। করোনায় আক্রান্ত কোনো কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রতিষ্ঠান পুরো চিকিৎসা ব্যয় বহন করে থাকে।

করোনা জয় করেছেন স্বয়ং সম্পাদকসহ মোট ১৫২ জন কর্মী। সম্পাদক দুবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৫০ দিন হাসপাতালে ছিলেন।

সব রকম সতর্কতা ও ব্যবস্থার পরও ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি নেমে আসে শোকের ছায়া। আমরা হারালাম বরেণ্য সাংবাদিক প্রিয় মিজানুর রহমান খানকে। তার মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিল ডেঙ্গু। হঠাৎ করেই মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক দিনের ব্যবধানেই চলে গেলেন নীরবে কাজ করে যাওয়া আবুল কালাম আজাদ (সম্পাদনা সহকারী)। বেদনার গল্পটা এখানেই শেষ নয়।

বাংলাদেশে যখন করোনার টিকা প্রয়োগের তোড়জোড় চলছে, মানুষের মধ্যে আশার আলো জেগেছে, করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে, অফিস-আদালত খুলছে, ঠিক তখনই নতুন স্বাভাবিক সময়ে ৭ অক্টোবর আমরা হারালাম আরেক প্রিয় সহকর্মীকে। দীর্ঘদিনের সহযাত্রী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক অরুণ বসু চলে গেলেন করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে।

সব মিলিয়ে ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮০ জন এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬ জন। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন আরও ১৫ জন। সবার পাশেই প্রথম আলো পরিবার ছিল। আক্রান্ত ও প্রয়াত সহকর্মীদের পরিবারের পাশেও রয়েছে প্রথম আলো

  • শামীম খান: হেড অব এইচআর