সংসদ সদস্য টুকু ও তাঁর সন্তান ত্রাসের রাজত্ব করছেন, অভিযোগ সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ (ডান থেকে প্রথম), মো. আবদুল বাতেন (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ও মো. আবদুস সেলিম (বাঁ থেকে তৃতীয়)
ছবি: প্রথম আলো

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু ও তাঁর সন্তান পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামস এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। নিজেদের বাহিনী দিয়ে বিরোধী সমর্থকদের মারধর ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে। বাবা–ছেলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘জনগণের শত্রু’ হিসেবে দাঁড় করানোর অভিযোগ তুলে পাবনা-১ (বেড়া–সাঁথিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হককে স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকে অপসারণের দাবিও জানান বর্তমানে গণফোরামের একাংশের নেতা আবু সাইয়িদ।

আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আবু সাইয়িদ এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শামসুল হকের ভাই ও বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. আব্দুল বাতেন, বেড়ার সন্ত্রাস, খুন ও দুর্নীতিবিরোধী কমিটির আহ্বায়ক মো. আবদুস সেলিম।

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বেড়া পৌর নির্বাচনে আসিফ শামসের কাছে (নৌকা প্রতীক) পরাজিত হন তৎকালীন মেয়র আবদুল বাতেন (নারকেলগাছ)। সেই থেকে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলে আসছে।

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ বলেন, সম্প্রতি পুলিশ দায়িত্ব পালনের নামে জনসাধারণ, বিশেষ করে অন্তত আটজন নারীর ওপর বিনা উসকানিতে আক্রমণ করেছে। পরে উল্টো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দিয়েছে। এ ছাড়া শবে কদরের সময় বিরোধীদের একটি ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনে যাঁরা যাচ্ছিলেন, তাদের বাধা দেয় ও পেটান শামসুল হক ও তাঁর ছেলের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. আবদুস সেলিম। তিনি বলেন, শবে কদরের দিন (২৯ এপ্রিল) স্থানীয় একটি ঈদগাহ মাঠে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করতে দেননি সংসদ সদস্য শামসুল হক ও তাঁর ছেলে। আগের দিন ইফতারের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে খাবারের আদেশ বাতিল করান তাঁরা।

পরে আবু সাইয়িদের বাসার আঙিনায় ইফতারের আয়োজন করা হয় বলে জানান আবদুস সেলিম। তিনি বলেন, সেদিন বিকেলে ইফতারে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিদের ১১টি পৃথক স্থানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর, লাঠিপেটা ও লাঞ্ছিত করেন ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক ও তাঁর ছেলের ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’। সেদিন থানায় জিডি করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ।

৩০ এপ্রিল সকালে বৃশালিখা গ্রামের বেড়াকোলঘাট বাজারের কিছু দোকানে (যেসব দোকানি ইফতারির আয়োজনে গিয়েছিলেন) সংসদ সদস্যের বাহিনীর লোকজন তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে অভিযোগ আবদুস সেলিমের। তিনি বলেন, ঈদের তৃতীয় দিন বৃশালিখা গ্রামের লোকজন দোকানের তালা খুলে দেয়। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো নারীদের বেধড়ক পেটায়।

অবশেষে গতকাল পাবনা থানায় গিয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। আর ঈদের তৃতীয় দিনের ঘটনায় উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে বেশ কয়েকজনের নামে মামলা দিয়েছে।

কেন বাধা দেওয়া হলো, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ বলেন, ইফতারের আয়োজনে সেখানকার পুলিশের ডিআইজি, এসপি, ওসি, ইউএনও, ডিসি—সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ অবস্থায় শামসুল হক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে প্রভাব খাটিয়ে ওই এলাকায় শত শত পুলিশ বাহিনী, র‍্যাব ও ডিবি মোতায়েন করেছেন। সঙ্গে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ যুক্ত করে মানুষকে পিটিয়েছেন, জখম করেছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি–ধমকি দিয়েছেন।

আবু সাইয়িদ আরও বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সভাপতি সেখানে প্রভাব খাটিয়েছেন সন্ত্রাসীদের লালন–পালন করতে। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে তিনি এলাকায় পুলিশকে নিয়ে অত্যাচার করেছেন।’ এখনো গ্রামে পুলিশ মোতায়েন আছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে শামসুল হকের মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি জার্মানি সফরে রয়েছেন বলেন তাঁর ছেলে আসিফ শামস জানিয়েছেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সামনে জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এমন প্রচার চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা বিএনপিপন্থীদের সঙ্গে মিলে এসব করছে।

পুলিশের ওপর প্রভাব খাটিয়ে নারী–পুরুষের ওপর হামলার অভিযোগ সম্পর্কে পৌর মেয়র আসিফ শামস বলেন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদের লোকজনই বরং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পৌরসভার স্থাপনা, দোকানে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে বাদী হয়ে পুলিশ মামলা করেছে।