সতর্কীকরণ বার্তায় বিভ্রান্তি আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহাই হলো কাল

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তাণ্ডবে বরগুনায় সাতজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন মারা যান ঝড় শুরু হওয়ার পর হুড়োহুড়ি করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হুমড়ি খেয়ে আহত হয়ে এবং অপর এক শিশু মারা যায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে।স্থানীয় দুর্যোগ বিষয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের মতে, প্রশাসনের নির্দেশনার পর সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে অন্তত এই তিনজনের মৃত্যু রোধ করা যেত। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বরগুনা সদর ইউনিটের দলনেতা জাকির হোসেন বলেন, তিন দিন ধরে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কীকরণ বার্তায় বারবার বলা হচ্ছিল, ঝড়টি আঘাত হানবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। সম্প্রচার মাধ্যমগুলো ফলাও করে এই খবর প্রচার করায় বরগুনাসহ দক্ষিণ উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে ধারণা জন্মায় যে এবারের ঝড়টি এখানে আঘাত হানবে না। এই আত্মবিশ্বাস থেকেই প্রশাসনের তাগিদ সত্ত্বেও বুধবার বিকেলে অনেকেই বসতঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। এ ক্ষেত্রে জীবনের চেয়ে সম্পদের প্রতি মোহাবিষ্ট থাকার বিষয়টিকেও দায়ী করেছেন অনেকে। বরগুনার কমিউনিটি রেডিও ‘লোকবেতারের’ পরিচালক তারেক মাহমুদ বলেন, শুরু থেকেই ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে অপেক্ষাকৃতভাবে মংলা বন্দরের কাছাকাছি অবস্থান করছিল। অথচ সংকেত দিতে গিয়ে মংলা বন্দরকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ দেখিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে লক্ষ্যস্থল করা হলো। বুধবার ঝড়টির গতিপথ পটুয়াখালীর খেপুপাড়া—বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরেও দক্ষিণ উপকূলের জেলাগুলোকে সংকেতের ক্ষেত্রে অনেকটা আড়ালে রেখে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল।
জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিকেন্দ্রের উপপরিচালক হাফিজ উদ্দীন আহমেঞ্চদ বলেন, ‘গতকাল আমরা যখন এসব এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পরামর্শ দিয়েছিলাম, তখন তাঁরা কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। ফলে এই ঝড়ে সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। ৭ নম্বর বিপৎসংকেত প্রচারের পর বরগুনার পাথরঘাটার বিষখালী নদীতীরের পোতাভাঙা এলাকার ঢালের বাইরে খুপরিতে বসবাসকারী আবদুস সালাম বুধবার দুপুরে বলেন, ‘ঝড় আইবে কি না এহনো হেইডা নিশ্চিৎ না। হুনছি ৭ নম্বর সিঙ্গাল দেছে। এইডা সিডরের চাইতে বড় ঝড় না।’ বিষখালী তীরের উত্তরা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, ‘ঘর চাইড়্যা কোনোহানে যামু না। হুনছি, এই হেই রহম বড় ঝড় না।’