সনদ সত্যায়নের ঝামেলা থেকে মুক্তি কবে
সরকারি চাকরি, ভর্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সনদ সত্যায়ন করতে হয়। এতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কমিটি ২০১৫ সালের সুপারিশে বলেছিল, সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়ন থাকবে না। এ ছাড়া ধীরে ধীরে ভর্তি, ঋণ গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন কাজে সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার কথাও সে সময় ভাবা হয়েছিল। গত বছর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়ন প্রক্রিয়া তুলে দেওয়া হবে। তবে এত দিনেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এতে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সনদ সত্যায়নের ঝক্কি এখনো রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা সরকারি এমন সিদ্ধান্তের ভুক্তভোগী মো. সাদিক। গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি সরকারি চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন।
সব কটিতেই তাঁর শিক্ষাসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল সনদ নেওয়ার পাশাপাশি সেগুলোর সত্যায়িত ফটোকপি নিতে হয়েছে। সত্যায়নের ক্ষেত্রে একটি পরীক্ষার বেলাতেই তিনি শুধু একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতে পেরেছিলেন। বাকি দুটির জন্য ভরসা ছিল ঢাকার নীলক্ষেতের নকল সিল।
সত্যায়নের কোনো দরকার নেই। কারণ, অনেক সময় এসব জাল হয়।আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব
নীলক্ষেতের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার সময়ে তাদের কাছে সত্যায়িত করার সিলের চাহিদা বাড়ে। ১০০ টাকার মধ্যে এসব সিল বিক্রি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সত্যায়নের কোনো দরকার নেই। কারণ, অনেক সময় এসব জাল হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, যেটা যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সত্যায়ন প্রথা চালু রয়েছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মনোনীত প্রার্থীকে ফর্মের সঙ্গে মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া খ ইউনিটে মনোনীত প্রার্থীকে ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষককে দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে।
মূল সনদ দেখানো হলে এবং অনলাইনে ফল যাচাইয়ের সুযোগ থাকার পরেও সত্যায়িত কপি চাওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে সত্যায়িত করার বিষয়টি। এটা থাকলে ক্ষতি নেই।
আবার বিসিএসসহ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায় মূল সনদের সঙ্গে সত্যায়িত কপি এখনো বাধ্যতামূলক। সম্প্রতি এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা নাজমুন সুলতানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর্মকর্তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলে কেউ সত্যায়ন করে দিতে চায় না। ফলে অনেককেই নীলক্ষেতের নকল সিলের ওপর ভরসা করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সত্যায়ন প্রক্রিয়া থাকবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা আছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিসিএসের বিষয় দেখে। সেখানে তারা সত্যায়ন রাখবে কি না, সেটা তারাই দেখবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাকরিতে যোগদানের সময় প্রত্যেকের সনদই এখন যাচাই করার সুযোগ আছে এবং যাচাই হয়।