সব ইতিবাচক সূচকে বাংলাদেশ তলানিতে: চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। আজ দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে
ছবি: প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, সব ইতিবাচক বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ তলানিতে। আর নেতিবাচক সূচকে বাংলাদেশ শীর্ষে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটি হলো বাস্তবতা, যা কাম্য ছিল না।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, এটা আনন্দের। কিন্তু যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সে জাতিকে কেন ৫০ বছর ধরে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের দেশের সীমানায় আটকে থাকতে হলো? জরিপ বলছে, দেশে অতিগরিব মানুষের সংখ্যা এখনো পৌনে দুই কোটি। ১০ শতাংশ ধনী মানুষের আয় দেশের মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ। আর ১০ শতাংশ গরিব মানুষের আয় দেশের মোট সম্পদের ১ শতাংশের কম। সুষম উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো তলানির দেশগুলোর একটি। বিশ্বব্যাংকের মানবসম্পদ সূচক বলছে, বাংলাদেশের শিশুরা তার সম্ভাবনার মাত্র ৫০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছে। গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশ ৮৮তম, মানবসম্পদ সূচকে ১২৩তম, মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৫তম, বিশ্বব্যাংকের বাণিজ্য সহজীকরণ সূচকে ১৬৮তম, দূষিত বায়ুর সূচকে প্রথম, দুর্নীতিতে ১৪তম এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৫১তম।

সংবাদ সম্মেলনে চরমোনাই পীর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে বিধিনিষেধের জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, মেহমানকে আপ্যায়ন করা ইসলামের রীতি। সে হিসেবে বাংলাদেশে আমন্ত্রিত সব বিদেশি মেহমানকে ইসলামী আন্দোলন স্বাগত জানায়। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিষয়টি আলাদা। তাঁর সহিংস অতীত ও ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতজুড়ে তিনি যে ধর্মীয় সহিংসতা উসকে দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশে তাঁকে স্বাগত জানানোর কোনো পরিবেশ নেই। তাঁর মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই মাইলফলকে উপস্থিত থাকা স্বাধীনতার মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তবে চরমোনাই পীর বলেন, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মসূচিতে তাঁরা যাবেন না। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করবেন। ২৬ মার্চ ঢাকাসহ দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের পতাকা র‍্যালি কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হবে বলেও জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির।

সুনামগঞ্জের সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার বিষয়ে চরমোনাই পীর বলেন, প্রতিটি ঘটনা একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, এসব হানাহানির পেছনে ধর্ম নয়, সেক্যুলার রাজনীতি ও জাগতিক স্বার্থ জড়িত। সব সময়ই এসব ঘটনায় ইসলামপন্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে স্বার্থান্বেষীরা স্বার্থ হাসিল করতে চায়। শাল্লাতেও একই নাটকের পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ, আমিরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।