সবচেয়ে আপন 'মা'

ছেলে খাচ্ছেন, পরম মমতায় বাতাস করছেন মা। ছবিটি রংপুর উত্তম এলাকা থেকে গতকাল তোলা । প্রথম আলো
ছেলে খাচ্ছেন, পরম মমতায় বাতাস করছেন মা। ছবিটি রংপুর উত্তম এলাকা থেকে গতকাল তোলা । প্রথম আলো

পুরান ঢাকার বনগ্রামের একটি ছোট্ট বাসায় স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকেন মাহফুজা বেগম। টানাটানি হলেও মোটামুটি চলে যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু গত বছর হঠাৎ মেরুদণ্ডের হাড়ে কিছু জটিলতা দেখা দেয় মাহফুজা বেগমের। অস্ত্রোপচারের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বিছানা আর হুইলচেয়ার হয়ে যায় নিত্যসঙ্গী। এত সমস্যার পর মাহফুজা বেগম একটি কাজ নিয়মিত করেন। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে শুয়ে রুটি বানান। রান্নাঘরে হুইলচেয়ারে বসে রুটি আর ডিম ভেজে দুই ছেলের সকালের নাশতা তৈরি করেন। শরীরের এই সংকটেও কেন নিজেকে এই কাজটি করতে হয়? মাহফুজা বেগমের চোখ ছলছল জবাব, ‘আমি নাশতা না বানালে যে ওরা খেতে চায় না।’
মাহফুজা বেগম একজন মায়ের প্রতিচ্ছবি। জগৎ-সংসারের প্রতিটি মা-ই এমন মমতাময়ী, দয়াবান। শত বেদনা সয়েও সন্তানের জন্য মায়ের অকৃত্রিম মমতা চিরদিনই থাকে।
যদি প্রশ্ন হয় কোন শব্দে সবচেয়ে বেশি আকুলতা, বেশি আবেগ, নিবিড় টান আছে—বিতর্ক ছাড়াই একটি উত্তরই আসবে পৃথিবীজুড়ে ‘মা’। মায়ের সঙ্গে সন্তানের গভীরতম সম্পর্কের কাছে সব সম্পর্কই যেন গৌণ। যে সম্পর্কের সঙ্গে আর কোনো তুলনা হয় না। একটি আশ্রয়ের নাম ‘মা’। একটি শব্দই মনে করিয়ে দেয় অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসার কথা। মা চিরন্তন। শুধু বিশেষ দিন নয়; মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রতিটি দিনের। প্রতিটি মুহূর্তের।
আজ বিশ্ব মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ‘মা দিবস’। প্রশ্ন জাগতে পারে, মা-তো প্রতিদিনের, প্রতিক্ষণের। তাহলে ‘মা’ নিয়ে আবার বিশেষ দিন কেন? কিন্তু ক্ষতি কী, যদি একটি বিশেষ দিনে মায়ের দিকে আরেকবার প্রাণভরে তাকাই, যারা দূরে থাকি তারা আরেকবার মাকে বিশেষভাবে স্মরণ করি। মাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য না হলেও মাকে সম্মান দেখাতে, স্মরণ করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মা দিবসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
বিশ্বের নানা প্রান্তে আজ পালিত হবে মা দিবস। হয়তো মায়ের হাতে মা দিবসের কার্ড দিয়ে কিংবা মায়ের প্রিয় রঙের শাড়িটি তুলে দিয়ে। অথবা মাকে চমকে দিয়ে তাঁর প্রিয় খাবারটি নিজের হাতে রান্না করে। অপরিশোধ্য মাতৃঋণের বদলে মাকে ক্ষণিকের আনন্দ দিয়ে খুশি হবে সন্তানেরা। দূরে থাকা মায়ের ছোঁয়া যাঁরা পাবেন না, তাঁরা দ্বারস্থ হবেন মুঠোফোনের। আর মাতৃহারা সন্তান বুকের সব কষ্ট চেপে মনে মনে বলে উঠবে, ‘আমি খুঁজেছি তোমায় মাগো’।
উইকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। তাঁর সে ভাবনা বাস্তবায়নের আগে ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তাঁর মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। আজ সেই দিন।
কর্মসূচি: মা দিবস উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আজাদ প্রডাক্টস ‘রত্নগর্ভা মা ২০১৩’ সম্মাননা দেবে সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে। বেলা ১১টায় ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে পাঁচজন গরবিনী মাকে সম্মান জানাবে আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। বেলা তিনটায় দৈনিক ইত্তেফাক ও বেসরকারি সংস্থা ডর্প যৌথভাবে ‘বাজেট ভাবনা: সংগ্রামে উন্নয়নে দারিদ্র্য বিমোচনে মা’ শীর্ষক আলোচনা আনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে।