সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যাচ্ছে বাপেক্স, সঙ্গী স্যান্তোস

অস্ট্রেলীয় কোম্পানি স্যান্তোসের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স। বঙ্গোপসাগরের ১৬ নম্বর ব্লকের মগনামা নামক স্থানে এই দুই কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে কূপ খনন করবে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এই কূপ খনন শুরু হবে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় কারওয়ান বাজারের বাপেক্স ভবনে দুই কোম্পানির মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রাথমিক চুক্তি (বাইন্ডিং এগ্রিমেন্ট) সই হয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কিন্তু আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কূপ খনন শুরু করতে হলে এখনই কিছু কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তাই প্রাথমিক চুক্তিটি করা হলো বলে বাপেক্স ও স্যান্তোসের কর্মকর্তারা বলেছেন।
কোনো বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের অংশীদার হওয়া এবং সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নেওয়া দুটিই বাপেক্সের জন্য এই প্রথম। এই কাজের মাধ্যমে বাপেক্সের জনবল নতুন ধারার কাজ ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আরও দু-একটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বাপেক্সের যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার কথাবার্তা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে।
অবশ্য উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি বা পিএসসির বিধান অনুযায়ী বাপেক্স এ দেশে কর্মরত কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির ১০ থেকে ২০ শতাংশ মুনাফার অংশীদার। এ জন্য বাপেক্সকে কোনো বিনিয়োগ করতে হয় না। আবার বাপেক্সের কোনো জনবল এসব কোম্পানির সঙ্গে কাজ করারও সুযোগ পায় না। স্যান্তোসের সঙ্গে অংশীদারত্ব সে রকম নয়। এ ক্ষেত্রে বাপেক্স বিনিয়োগও করবে। বাপেক্সের জনবলও সরাসরি কাজে অংশ নেবে।
গতকাল সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী মগনামায় প্রাপ্ত গ্যাসের ৫১ শতাংশ পাবে স্যান্তোস। ৪৯ শতাংশ পাবে বাপেক্স। দুই কোম্পানি বিনিয়োগও করবে এই অনুপাতে। তবে মগনামায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপসহ অনুসন্ধান কাজে যে ব্যয় হয়েছে (মোট ৯ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার), তার ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বাপেক্স পরিশোধ করবে। যদিও স্যান্তোসের দাবি ছিল আরও বেশি, কিন্তু দর-কষাকষির মাধ্যমে এই অঙ্কে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
চুক্তি সইয়ের পর বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুজ্জামান ও স্যান্তোসের এ দেশের প্রধান মাহমুদুল করিম সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বাপেক্স-স্যান্তোসের যৌথ উদ্যোগ শুধু মগনামায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভবিষ্যতে তা আরও অনেক ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হবে।
তাঁরা বলেন, সরকার মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে যে ‘এনার্জি হাব’ (১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাবন্দর প্রভৃতি) করার কাজ শুরু করেছে, সেখান থেকে মগনামার দূরত্ব ২০ কিলোমিটারেরও কম। কাজেই তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে মগনামা থেকে সেখানে তা সরবরাহ করা সহজ হবে। এ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কাছেও গ্যাস বিক্রির সুযোগ আছে।
বাপেক্সের একটি সূত্র জানিয়েছে, মগনামার গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘনফুট) আট ডলারের কম হবে না, যা বর্তমান বাজারে এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দামের সমান। আর মগনামার সম্ভাবনা সম্পর্কে স্যান্তোস যা বলে, বাপেক্স তার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয়। স্যান্তোসের অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সঙ্গে বাপেক্সের মতভিন্নতা রয়েছে।
মগনামায় অংশীদারত্বের জন্য বাপেক্সের যে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, তা গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে দেওয়ার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাপেক্সের সূত্র জানায়, মগনামা জায়গাটি ১৬ নম্বর ব্লকের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের অদূরে। পিএসসির অধীনে যুক্তরাজ্যের কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসির জরিপে সেখানে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা চিহ্নিত হয়েছিল। কিন্তু তারা সেখানে কূপ খনন করেনি। একপর্যায়ে কেয়ার্ন ১৬ নম্বর ব্লক স্যান্তোসের কাছে হস্তান্তর করে চলে যায়।
ইতিমধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর স্যান্তোস মগনামার জরিপ প্রতিবেদন আরও বিশ্লেষণ করে সেখানে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করে এবং তার ফলাফল দেখে অনুসন্ধান কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ জন্য তাঁরা একটি সহ অংশীদার কোম্পানি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। একপর্যায়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্সকে স্যান্তোসের সহ অংশীদার করার।