সময় এখন ‘মেড ইন জিনজিরা’র

পণ্য নকল করে উৎপাদন করার বদনাম ছিল জিনজিরা আর ধোলাইখালের। এই এলাকা এখন হালকা প্রকৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর এলাকার একটি ডকইয়ার্ডে কাজ করছেন শ্রমিকেরাছবি: মানসুরা হোসাইন

বুড়িগঙ্গার এ পারে ঢাকার ধোলাইখাল আর ও পারে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা। সাত দশক আগে এখানে হালকা প্রকৌশলশিল্পের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তাতে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। বটি থেকে সমুদ্রগামী জাহাজ, পিঠ চুলকানোর প্লাস্টিকের লাঠি তৈরির ছাঁচ থেকে শুরু করে পাটকল-বস্ত্রকলের যন্ত্রপাতি। কী তৈরি হয় না এখানে!

একসময় শিল্পের যন্ত্রাংশের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি বিদেশনির্ভর ছিল। তবে বুড়িগঙ্গার দুই পারের কারিগরেরা জানালেন, তাঁরা এখন কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, গাড়ি, রেলওয়েসহ বিভিন্ন খাতের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করেন। কেবল যন্ত্রাংশই তৈরি করেন না, যন্ত্রাংশ তৈরির মেশিন বানিয়েও বেচছেন তাঁরা। সারা দেশে সেই যন্ত্রের ব্যবহার আছে, যার কারণে যন্ত্রের জন্য বিদেশনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ তো দূরের কথা, এখানকার কারিগরদের কেউ কেউ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নও নন। শুধু দেখে দেখে শিখে এই মানুষগুলো দেশের হালকা প্রকৌশল খাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন। জিনজিরার তাওয়াপট্টিতে নিজের মামার এক কক্ষের একটি ছাঁচ তৈরির কারখানায় কাজ করেন মোহাম্মদ হৃদয়। তিনি বলেন, ‘আমার মামাও কোনো জায়গায় কাজ শেখে নাই, আমিও শিখি নাই। দেইখ্যা দেইখ্যা এখন অনেক কিছু বানাইতে পারি। খালি স্যাম্পল বা ভিডিও দেখালেই হইব, ঠিক ওই জিনিসই বানাইয়্যা দিতে পারব।’

হালকা প্রকৌশলশিল্প খাতের শ্রমিকেরা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের জিনজিরার তাওয়াপট্টিতে
ছবি: মানসুরা হোসাইন

পুরোনো ব্যবসায়ীরা জানালেন, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর অবাঙালি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে প্রথমে হালকা প্রকৌশলশিল্পের যাত্রা শুরু হয় ধোলাইখালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অবাঙালিরা চলে গেলে কারখানার হাল ধরেন স্থানীয় কারিগরেরা। তাঁরাই পরে জিনজিরাসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। তখনই ‘মেড ইন জিনজিরা’ কথাটি চালু হয়েছিল নেতিবাচক অর্থে। নকল ও মানহীন পণ্য মানেই মেড ইন জিনজিরা—এমন প্রচারণাও ছিল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব কারিগরের নামের পাশে অলিখিতভাবে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দ যোগ হয়েছে। তবে এই ইঞ্জিনিয়ারদের সফলতার অনেক গল্প ঢেকে গেছে ‘মেড ইন জিনজিরা’র অপবাদে।

তবে সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান বললেন, জিনজিরা বা ধোলাইখাল নয়, পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিদেশি সাবান, শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন পণ্যের আদলে পণ্য তৈরি ও মোড়কে ভরে বিক্রি হচ্ছে। এটা অবশ্যই নকল। এসব পণ্য হালকা প্রকৌশল খাতের পণ্য নয়। ধোলাইখাল-জিনজিরার আসল চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।

হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিভিন্ন কারখানায় বিকট শব্দে কান পাতা দায়। সেখানে বসেই শ্রমিকদের কাজ করতে হয় ঘণ্টার পর ঘন্টা। তাই কিশোর এবং তরুণেরা কানে হেডফোন গুঁজে কাজ করেন। অনেকটা শব্দ দিয়ে শব্দ ঢাকার মতো
ছবি: মানসুরা হোসাইন

এসএমই ফাউন্ডেশন সারা দেশে ১৭৭টি শিল্পগুচ্ছ (ক্লাস্টার) এলাকা চিহ্নিত করেছে। ধোলাইখাল গুচ্ছ এলাকাকে লালবাগ, শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া, পোস্তগোলা, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, টিপু সুলতান রোডসহ আশপাশের এলাকাকে চিহ্নিত করেছে। ফাউন্ডেশন ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনে বলেছে, এই গুচ্ছের পণ্যের তালিকায় গাড়ির ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, অটো কাটার, গ্যাস রেগুলেটর উল্লেখযোগ্য। বস্ত্র, পাট, নির্মাণ খাত, কাগজ কারখানা, ওষুধশিল্প, চা–শিল্পের যন্ত্রাংশও তৈরি হয় সেখানে।

ব্যবসায়ীরা জানালেন, জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হালকা প্রকৌশল পণ্যকে ২০২০ সালের ‘বর্ষ পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এখন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আশপাশের এলাকায় ৩০০টির বেশি এ ধরনের কারখানা রয়েছে। ধোলাইখাল ও আশপাশের এলাকায় রয়েছে দুই হাজারের বেশি কারখানা।

জিনজিরা বা ধোলাইখাল নয়, পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিদেশি সাবান, শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন পণ্যের আদলে পণ্য তৈরি ও মোড়কে ভরে বিক্রি হচ্ছে। এটা অবশ্যই নকল। এসব পণ্য হালকা প্রকৌশল খাতের পণ্য নয়। ধোলাইখাল-জিনজিরার আসল চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন
মাসুদুর রহমান, চেয়ারম্যান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইউএসএআইডির ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশ হালকা প্রকৌশলশিল্পে বছরে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ খাতে কাজ করেন প্রায় আট লাখ মানুষ।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, হালকা প্রকৌশল কারখানার ২০ শতাংশ ঢাকায়। ধোলাইখালের তুলনামূলক বড় কারখানাগুলো মাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার লেনদেন করে। ছোট কারখানায় সেটা চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা।

ধোলাইখালের মানুষের কথা

সালেহ আহমেদ ১৯৬৭ সালে ধোলাইখালে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৩ বা ১৪ বছর। এখন তিনি এসবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক। তাঁর দুই কক্ষের কারখানায় যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য রয়েছে আটটি যন্ত্র। সালেহ আহমেদের এক ছেলেও এখন এ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। শ্রমিক থেকে মালিক, বাবার কারখানায় ছেলের যুক্ত হওয়া—এমন গল্প অনেক আছে ধোলাইখালে।

টিপু সুলতান রোডে এশিয়ান টুলসের মালিক হায়দার আলীর বাবা ভারত থেকে পুরান ঢাকায় এসে কারখানা চালু করেন। বিজ্ঞানে স্নাতক হায়দার আলী ৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে একটি আধুনিক কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল (সিএনসি) যন্ত্র যুক্ত হয়েছে তাঁর কারখানায়। এ যন্ত্র দিয়ে নিখুঁতভাবে যন্ত্রাংশের ছাঁচ তৈরি করা যায়। কম্পিউটারে নির্দেশনা দিয়ে সাবানের ছাঁচ তৈরির পদ্ধতি দেখাতে দেখাতে হায়দার আলী বললেন, ‘এই যে পিঠ চুলকে দেওয়ার হাতল দেখছেন, এটার ছাঁচ তৈরির জন্য বড় বড় কোম্পানিকে আমাদের কাছে আসতে হচ্ছে। একইভাবে রেলওয়ে, ওষুধ শিল্পসহ বড় শিল্পকারখানাগুলোও আমাদের ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল।’

পুরান ঢাকার ধোলাইখালে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিক মেশিনে কাজ করছেন এক তরুণ
ছবি: মানসুরা হোসাইন

মোহাম্মদ আলীর বয়স প্রায় ৭০ বছর। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ধোলাইখাল এলাকায় এ কে এম এস ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়ার্কসে রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করেন। মেসার্স ফাতেমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক ইব্রাহিম খলিল জানালেন, তিনি ওষুধ কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ওষুধের পাতার ছাঁচ তৈরি করেন।

ধোলাইখালের আলমগীর ব্রাদার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়ার্কসের মালিক আলমগীর খোকন বলেন, দোকানের শাটার তৈরির যন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানি করতে আট লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। সেই যন্ত্র তাঁরা তৈরি করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

ঘুরে দেখা জিনজিরা

বুড়িগঙ্গার ও পারে জিনজিরা, তাওয়াপট্টি, লোহাপট্টি ও আগানগর এলাকায় রয়েছে ছোট, বড় ও মাঝারি ৩০০টির বেশি কারখানা। এসব কার‌খানায় নাটবল্টু, ওয়াশার, তৈজসপত্র, ওয়েল্ডিং মেশিনের ছোট–বড় যন্ত্রাংশ, দা-বটিসহ হরেক রকমের পণ্য তৈরি হয়। তাওয়াপট্টিতে দেখা গেল বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকের কানে হেডফোন। কারখানার ভেতরে বিকট শব্দ। সে শব্দে কান পাতা দায়। চেঁচিয়ে না বললে কাছের মানুষও কিছু কথা শুনতে পান না। শব্দ থেকে বাঁচতে হেডফোনে গান শোনার বন্দোবস্ত।

তাওয়াপট্টির বাহার ইলেকট্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে প্রায় ৪০০ শ্রমিক সরকারের পল্লী বিদ্যুতের সরঞ্জাম তৈরি করেন। কারখানার উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানালেন, দেশে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতের সরঞ্জাম ও উপকরণ তৈরির কাজ করে। তার মধ্যে তাঁদেরটি একটি। আগে পল্লী বিদ্যুতের অনেক উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো, এখন দেশেই তা তৈরি হচ্ছে।

জিনজিরার তাওয়াপট্টিতে এক নারী শ্রমিক কাজ করছেন
ছবি: মানসুরা হোসাইন

তাওয়াপট্টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বণিক মালিক সমিতির সভাপতি মো. আকতার জেলানী বললেন, জিনজিরা ও আশপাশের এলাকায় আমদানি বিকল্প বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। আবার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে পুরোনো জাহাজ, শিল্পকারখানা, ভবন নির্মাণকালে বেঁচে যাওয়া লোহার টুকরা ও পাত সংগ্রহ করেই নানা যন্ত্রপাতি তৈরি হয়।

বুড়িগঙ্গার ও পারে আরেকটি হালকা প্রকৌশল কারখানার নাম শরীফ আয়রন স্টোর। তাঁরা রিপিট (ছিদ্র বন্ধ করার ইস্পাতের রিং, পাত বা দণ্ড) তৈরির যন্ত্র তৈরি করেন। এর মালিক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘রিপিট তৈরির একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র জাপান থেকে আমদানি করতে খরচ হয় ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকা। চীন থেকে আনলে খরচ পড়বে ১২ লাখ টাকার মতো। অথচ এ যন্ত্র আমরা তৈরি করি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায়।’

তৈরি হয় জাহাজও

কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে প্রায় দেড় শ ডকইয়ার্ড রয়েছে, যেগুলোতে ছোট-বড় যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান তৈরি হয়। উপজেলার কালীগঞ্জ, কোন্ডাসহ এলাকার ডকইয়ার্ডের মালিক-শ্রমিকেরা বেশ গর্ব করেই বললেন, হাতুড়ি-বাটালি দিয়ে তাঁরা জাহাজ বানিয়ে ফেলছেন, এমন দৃশ্য দেখে বিদেশিদেরও চোখ কপালে ওঠে। এখানে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়।

স্থানীয় মেসার্স ওয়াক্কিয়া মেরিন শিপবিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির স্বত্বাধিকারী আবদুল আলিম নৌযান তৈরির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ডকইয়ার্ডগুলোতে মূলত জাহাজের কাঠামো তৈরি হয়। এ ছাড়া পাখা বা প্রপেলার, অ্যাংকরের মতো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়। তাঁদের তৈরি নৌযানের গুণগত মানও ভালো বলে দাবি তাঁর।

জাহাজ নির্মাণ শিল্প ভারী শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। তবে জাহাজ নির্মাণের প্রায় ২৫ শতাংশ যন্ত্রাংশই তৈরি করছেন কেরানীগঞ্জের হালকা প্রকৌশল শিল্পের শ্রমিকেরা
ছবি: মানসুরা হোসাইন

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নেয়ামত উল্লাহ চৌধুরীর জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকারী ডকইয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর ছেলে সায়মন চৌধুরী। তিনি মনে করেন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করা জরুরি।

কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে ইউটিলিটি প্রফেশনালস। এই প্রতিষ্ঠানের সিইও মো. হাসমতুজ্জামান প্রথম আলোকে বললেন, পণ্য তৈরির সময় রপ্তানির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পণ্যকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

দরকার সমর্থন, সহায়তা

উদ্ভাবন, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অবদানের তুলনায় ধোলাইখাল ও কেরানীগঞ্জের উদ্যোক্তারা সরকারি সমর্থন ও সহায়তা কম পাচ্ছেন বলে অভিযোগ মালিক ও কারিগরদের। নথিপত্র ঘেঁটে ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮০–এর দশকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ধোলাইখাল-জিনজিরার হালকা প্রকৌশলশিল্পের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে পাঁচ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। মূলত তখনই এসব উদ্যোগের বিকাশ ঘটে। এর পরপরই ধোলাইখাল-জিনজিরা মডেল সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে আরও একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিক। যদিও সরকার পরিবর্তনসহ নানা কারণে সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি।

পুরান ঢাকার ধোলাইখালের বিভিন্ন কারখানায় কেউ কেউ কাজ করছেন ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে
ছবি: মানসুরা হোসাইন

বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) হালকা প্রকৌশলশিল্পের উন্নয়নে টুল ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রকল্প নেয় ২০১৬ সালে। টুল ইনস্টিটিউট প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, জিনজিরা-ধোলাইখালের পণ্যের মান নিয়ে যেসব অপবাদ আছে, ইনস্টিটিউট পুরোদমে কাজ শুরু করলে, তা দূর করা সম্ভব হবে। ইনস্টিটিউটে গবেষণা, উদ্ভাবন, নকশা তৈরির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হবে।

১৯৮০–এর দশকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ধোলাইখাল-জিনজিরার হালকা প্রকৌশলশিল্পের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে পাঁচ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। মূলত তখনই এসব উদ্যোগের বিকাশ ঘটে

তেজগাঁওয়ে টুল ইনস্টিটিউটের ১০ তলা ভবন তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি তলা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, যেখানে পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার সুযোগ পাবেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া সিএনসি যন্ত্র বসানো হয়েছে, যা ফি দিয়ে ব্যবহার করতে পারে হালকা প্রকৌশল কারখানাগুলো।

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, জিনজিরা-ধোলাইখালের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বব্যাংকও কাজ করেছে। এখন দরকার এসব এলাকা কেন্দ্র বা হাব তৈরি করে বিজনেস মডেল প্রতিষ্ঠা করা। তারপর আস্তে আস্তে কেউ চাইলে নিজস্ব চিন্তাভাবনা নিয়ে পণ্যের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন।


[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন]