সময় বাঁচানোর প্রকল্পই খাচ্ছে সময়

টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আট বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৪ শতাংশ।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধীরগতির কারণে দুর্ভোগে চলাচলকারীরা। চারদিক ধূলিময় হয়ে থাকে সব সময়। গন্তব্যে পৌঁছাতেও সময় লাগছে বেশি। ১৭ নভেম্বর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-গাজীপুর রুটে নিয়মিত বাস চালান মোস্তাফিজুর রহমান। সড়ক নিয়ে প্রশ্ন করতেই একটানা শোনালেন কথাগুলো—‘চৌরাস্তা থাইক্যা টঙ্গী ১২ কিলোমিটার। যাইতে দুই-তিন ঘণ্টা লাইগা যায়। হাইট্যা গেলেও আপনে আগে চইল্যা যাইবেন। অহন তো রাস্তার কাম চলতাছে। হের লাইগ্যা অবস্থা আরও খারাপ।’ ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলতাফ হোসেন বললেন, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসে ঢাকার উত্তরায় পৌঁছাতে আগে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট সময় লাগত। রাস্তার কাজ চলায় এখন লাগছে প্রায় দেড় ঘণ্টা।

ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও সময় বাঁচাতে বড় এই প্রকল্প। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় সেই প্রকল্পই খেয়ে ফেলছে মানুষের সময়। তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোয় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে ব্যয়ের অঙ্কটা। আট বছরে কাজের অগ্রগতি এক-তৃতীয়াংশের মতো। সড়কজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি আর জোড়াতালিতে জনদুর্ভোগ চরমে।

প্রকল্পের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কও তৈরি হয়নি। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বৃষ্টিতে কাঁদা-মাটি আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালুতে নগরবাসীর চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালে শুরু হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা না হওয়ায় প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। এরপর আরেক দফায় ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার খরচ ধরা হয় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। করোনার কারণে আবারও সময় বাড়ানো হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২ সালের জুনে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩৪ শতাংশ।

১৭ নভেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ভোগের শুরু উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে। সেখানে চলছে প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ। কিন্তু যানবাহন চলাচলের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের। টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে স্টেশন রোড পর্যন্ত যেখানে-সেখানে ভাঙাচোরা। স্টেশন রোড থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত অবস্থা কিছুটা ভালো। গাজীপুরায় খোঁড়াখুঁড়ি করে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। পাশে চলছে আরও খোঁড়াখুঁড়ি। যানবাহনগুলো ৫-১০ গজ যাচ্ছে আর দু-তিন মিনিট থামছে।

গাজীপুরা থেকে কিছুদূর পর্যন্ত সড়কে ভালো আছে। কিন্তু কুনিয়া, বড়বাড়ি ও তারগাছ এলাকায় সড়ক বেহাল। সড়ক বিভাজকগুলো ভেঙে সড়কের মধ্যেই ফেলে রাখা হয়েছে। দুই পাশে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে রাখায় ধুলাবালুতে একাকার।

বিআরটি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (পিএম-১) মো. কাউসার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, এত বড় কাজের জন্য বিকল্প সড়ক তৈরি করতে হয়। কিন্তু সে জন্য আশপাশে জায়গা নেই। তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সড়কে প্রতিদিনই পানি ছিটানো হয়। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যেই শুকিয়ে যায়। দিনে কয়েকবার পানি ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেটা হলে আর ধুলাবালু থাকবে না।