সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ

  • ১২২ কোটি টাকা ব্যয়। ৬৬ কোটি টাকা পরিশোধ।

  • ২৫টি স্থানে বাঁধে ভাঙন, ৩০৫ হেক্টর জমি পানির নিচে।

হাওরের ফসল রক্ষার জন্য বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন কৃষকেরা। গতকাল সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের রাধানগর এলাকায়
ছবি: খলিল রহমান

বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ সময় বাড়িয়ে নিয়েও শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে হাওরের ফসল।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে হাওরের সব বাঁধের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরে বোর্ডের অনুরোধে সময় আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরও কাজ শেষ হয়নি। বাঁধের পাশাপাশি হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৩৫টি ক্লোজার (বিশেষ অবকাঠামো) মেরামতের কাজও ঠিকমতো হয়নি।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত তিন দিনে উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে বাঁধগুলোর ২৫টি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ১৩৫টি ক্লোজারের প্রায় সব কটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে।

‘এখন আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে নতুন করে যাতে আর বাঁধে ভাঙন না দেখা দেয়, সেই ব্যবস্থা করা। তদন্তের কাজও শুরু করেছি।’
বিমল চন্দ্র সোম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ জেলার উপপরিচালক

স্থানীয় পর্যায়ের খবর অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার কয়েকটি উপজেলার হাওর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করা বেশির ভাগ বাঁধ চুইয়ে হাওরে পানি ঢুকছে। ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা সারা রাত বাঁধে অবস্থান করে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন। কোনো কোনো হাওরে উপজেলা প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরাও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ছিলেন।

হাওরে বাঁধ মেরামতের অগ্রগতি নিয়ে গত সপ্তাহে পাউবোর সুনামগঞ্জের কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় এ পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় ১২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৬৬ কোটি টাকা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ১৩৫টি ক্লোজার এবং প্রায় সব কটি হাওর রক্ষা বাঁধ এখন হুমকিতে আছে। নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং চুইয়ে হাওরে পানি প্রবেশের খবর আসছে। তিনি জানান, পাউবোসহ সরকারি সব সংস্থা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য কাজ করছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে বাঁধ ভাঙার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া—এই সাত জেলার হাওরে প্রায় ১৩ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বোরো মৌসুমে হাওরের ধান আগে ওঠে। এই ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়।

টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে যাওয়া নিয়ে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ জেলার উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে নতুন করে যাতে আর বাঁধে ভাঙন না দেখা দেয়, সেই ব্যবস্থা করা। তদন্তের কাজও শুরু করেছি।’

সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯৫টি হাওরের মধ্যে ৫টিতে এরই মধ্যে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। এ পর্যন্ত ৩০৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। অবশ্য সবচেয়ে বড় শনির হাওরে এখনো পানি ঢুকতে পারেনি।

২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বাঁধের কাজ শেষের কথা। ১০ দিন সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি।

হাওরে ঢল নামার কারণে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, গতকালও চেরাপুঞ্জিতে ভারী (৪৩৪ মিলিমিটার) বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সিলেট ও সুনামগঞ্জের নদ-নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল ছিল। তবে আগামী দু-এক দিন নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে যেতে পারে।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধগুলোকে নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ]